নদীতে ব্রিজ না থাকায়

মোংলায় কাংখিত সেবা দিতে পারছেনা সাইলো কর্তৃপক্ষ

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৮:২২ পিএম, মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী ২০১৯ | ৮০২

নির্মানের তিন বছরেও শুরু হয়নি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্ধের মেগা প্রকল্প হিসেবে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনির ঘোল এলাকায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা খাদ্য গুদাম থেকে সড়ক পথে খাদ্য সরবরাহ। গুদাম সংলগ্ন মোংলা থেকে জয়মনি পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কটির বেহাল দশা আর মোংলা নদীতে নাই কোন ব্রিজ। এর ফলে খাদ্য গুদাম থেকে সড়ক পথে খাদ্য পন্য সরবরাহ করতে না পারায় এর সুফল ভোগ করতে পারছেনা দক্ষিনাঞ্চলবাসী। এছাড়াও খাদ্যগুদামে কারিগরি সমস্যা, জেটি সংলগ্ন ভরাট হওয়া । নৌপথ ও সড়ক পথে মালামাল খালাস-বোঝাইয়ের ৪টি পয়েন্টে দুইটি পথই বন্ধ, তাই সাইলোর এসকল সমস্য সমাদান,দ্রুত ভারী যানবাহন চলার উপযোগী সড়ক ও মোংলা নদীর উপর ব্রীজ নির্মানের দাবি স্থানীয় ও দনিাঞ্চল বাসীর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আপাতকালীন দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রায় সাড়ে ৫শ’কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা উপজেলার জয়মনিতে ৫০ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য শস্য ধারন ক্ষমতা সম্পুন্য অত্যাধুনিক এ সাইলোটি নির্মিত হয়। ২০১৩ সালে ১৩ নভেম্বর নির্মান কাজ শুরু হওয়া এ সাইলোটি গত ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় লাইটার যোগে পরীক্ষামূলক ভাবে ৪শ’৬ মেট্রিক টন খাদ্য পন্য গম গুদামজাত করা হয়। এ সাইলোর জন্য সরকারিভাবে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত গমের প্রথম চালান নিয়ে গত ২০১৭ সালের ৯ মার্চ মোংলা বন্দরে ভিড়ে গম বোঝাই জাহাজ। রাশিয়া থেকে আসা গম নিয়ে এমভি ‘নর্ডলে’ নামের পানামার পতাকাবাহী এ জাহাজটি বন্দরের পশুর চ্যানেলের হারবাড়িয়া বহিনোঙ্গরে অবস্থান করে। প্রথমবারের মতো আসা গমবাহী জাহাজটি নাব্যতা সমস্যার কারণে সাইলোর জেটিতে তখনই ভিড়তে পারেনি। ফলে ম্যাদার ভ্যাসেল থেকে ছোট লাইটার যোগে খালাসের পর সাইলো জেটিতে লোডিং কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। গম লোডিং শুরু হলেও ধীর গতি নিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে সাইলো সংশ্লিষ্টরা। সাইলো জেটির দুটি লোড পয়েন্টের একটি অচল হয়ে আছে। অপরটি চললেও কিছুক্ষন পর পর বন্ধ হয়ে থাকছে। দক্ষ জনবল না থাকায় এ অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

মোংলা জয়মনির ঘোল সাইলো সহকারী রক্ষন প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, খাদ্য গুদামটি শুরু হয়েছে প্রায় ৩ বছরে ও সম্পুর্নভাবে এর সুফলতা ভোগ করতে পারছেনা দক্ষিনাঞ্চলবাসী। এখানে বেশ কয়েকটি কারিগরি ত্রুটি রয়েছে, এছাড়াও জয়মনি থেকে মোংলা পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কটি মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে কয়েক বছর ধরে। এখানকার সাইলো থেকে সড়ক পথে মালামাল আনা-নেয়ার জন্য মোংলা নদীতে ব্রিজ না থাকায় কাংখিত সেবা দিতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ।

চিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী আকবার হোসেন বগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মোংলায় নির্মিত খাদ্যসষ্য মজুদ রাখার জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্ধের মেঘা প্রকল্প এ সাইলোর প্রধান সমস্যা হলো টেকসই সড়ক নির্মান ও মোংলা নদীতে একটি ব্রিজ। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বার বার অনুরোধের পরও সড়কটি পূর্ন নির্মানের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এখানে ম্যাদার ভ্যাসেল থেকে কার্গো বা লাইটারে দ্রুত গতিতে গম খালাস করা হলেও সাইলোর কারিগরি ত্রুটির কারণে লোডিংয়ে ধীর গতি চলছে। তিনি আরো জানান, অত্যাধুনিক এ সাইলোর প্রযুক্তি অনুযায়ী চব্বিশ ঘন্টায় ২ হাজার মেট্রিকটন গম লোডিং করার কথা থাকলেও তা পেরে উঠছে না কর্তৃপক্ষ। গম নিয়ে একাধিক লাইটার সাইলো জেটির লেডিং পয়েন্টে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয় কিন্তু গম লোডিংয়ের ধীর গতিতে নির্ধারিত সময় খালাস করা সম্ভব হয়না কার্গো বা লাইটার থেকে। আর এ জন্য তিনি সাইলোর কারিগরি ত্রুটি ও দক্ষ জনবল সংকটকে দায়ী করেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে গমবাহি ম্যাদার ভ্যালেস কর্তৃপক্ষ,আমদানীকারক, শিপিং এজেন্ট ও স্টীভিডরর্স এবং লাইটার কর্তৃপক্ষকে মোটা অংকের অর্থিক ক্ষতি গুনতে হবে। তবে এ বিষয়ে সাইলো’র অন্য বিভাগের প্রকৌশলী রাকেশ বিশ্বাস বগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সাইলো’র লোডিং পয়েন্টে যথা নিয়মে কাজ চলছে। কোন প্রকার ত্রুটির থাকার কথা অস্বীকার করে তিনি আউটডোর বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে তারা শুধু আমদানীকৃত গমের গুনগতমান পরীক্ষা করেই জাহাজ থেকে খালাস ও লোডিংয়ের অনুমতি প্রদান করেছেন। কিন্তু সাইলোর অভ্যান্তরের ত্রুটিসহ অন্য কোন বিষয়ে অবগত নয় বলে জানান তিনি।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মোংলার পশুর নদীর তীরে জয়মনিতে ৫০ হাজার মেঃ টন ধারন ক্ষমতা সম্পুর্ন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইলোটি (খাদ্য গুদাম) নির্মান করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রনালয় নির্দেশনা মোতাবেক গম আমদানী, খালাস,মজুদ ও বিতরন প্রক্রিয়াজাত করা হবে বলে ৫’শ কোটি টাকা ব্যায়ে এটি নির্মিত হয়। এ সাইলোটি দুর্যোগকালীন এবং এ অঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে দক্ষিন-পাশ্চিমাঞ্চলে চাহিদা পুরোনের নিশ্চিত করার লক্ষে সরকারের খাদ্য মন্ত্রনালয় সাইলো নির্মানের পরিকল্পনা করে। আর এ পরিকল্পনা অনুযায়ী মোংলা শহর থেকে মাত্র ২২ কিঃমিঃ দক্ষিনে সুন্দরবনের কোল ঘেষে পশুর নদীর তীরে মোংলা সাইলো গুদাম নামে এটি নির্মান করা হয় ২০১৬ সালে। সেই থেকে খাদ্য মজুদ করা শুরু হয় মোংলার এ খাদ্য গুদামটিতে কিন্তু এখানে নৌ-পথে খাদ্য পরিবহনের ব্যাবস্থা থাকলেও কয়েক বছর পেড়িয়েছে সড়ক পথে পন্য অন্যত্র পাঠানো যাচ্ছেনা।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, জয়মনির ঘোল সাইলোতে সরকারের বিদেশ থেকে আমদানী করা গম নিয়ে ভিড়তে পারছেনা বিদেশী জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল)। সাইলো জেটি এলাকায় নাব্যতা সংকটের কারণে গম নিয়ে বহিনোঙ্গরে অবস্থান করেই গম খালাস করে তা ছোট ছোট লাইটার বা কার্গোতে করে নিয়ে আসতে হয় এখানে। এ ছাড়া নতুন নির্মিত এ সাইলোর দক্ষ জনবল না থাকা ও কারিগরি সমস্যার কারণে ধির গতীতে চলছে লোডিং কাজ। কারিগরি ত্রুটির কারণে গম লোডিংয়ে ৪টি পয়েন্টের দুইটি নাম মাত্র সচল থাকলেও অপর ২টি অচল হয়ে পরে আছে। এ অবস্থায় সাইলো উদ্বোধনের পর গম নিয়ে আসা জাহাজ গুলো খালাস কাজে বিড়ম্বনায় পরে। এতে জাহাজ কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট, স্টীভিডরসসহ সংশ্লিষ্টরা মোটা অংকের টাকার অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এখানে বড় সমস্যা হলো সড়ক পথে, সাইলো সংলগ্ন রাস্তা ও মোংলা নদীতে ব্রিজ নির্মান। সাইলো প্রকল্পে রাস্তা নির্মানের অর্থ বরাদ্ধ থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়নি রাস্তা ও ব্রিজ নির্মানে। তবে নদীতে ব্রিজ ও রাস্তা নির্মানে নতুন সরকারের শুরুতেই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে এমনটি জানালেন স্থানীয় সংসদ উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার।

এ সাইলোকে কেন্দ্র করে ১’শ ২৫ মিটার ব্রিজের সাথে ২’শ ৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি টারমিনাল নির্মান করা হয়েছে। যা দিয়ে দেশের ১৯ জেলার খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে মোংলার এ গুদাম থেকে খাদ্য সরবরাহ করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিবে সরকার এমনটাই প্রত্যাশা দক্ষিনাঞ্চলবাসীর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত