৬ জলদস্যু বাহিনীর ৫৪ সদস্যের আত্মসমর্পণ

সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করলেন প্রধানমন্ত্রী

মামুন আহম্মেদ

আপডেট : ০৪:০২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর ২০১৮ | ১৬৫৮

প্রায় ১০ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার নিয়ে গঠিত সুন্দরবনকে ‘দস্যুমুক্ত’ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের একক বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ এ বনটিতে একসময় দাপিয়ে বেড়ানো জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের ধারাবাহিকতায় সবশেষ ছয়টি বাহিনীও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অস্ত্রসমর্পণ করার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেন।


বৃহস্পতিবার সকালে বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে ওই ছয়টি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ঢাকায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বলেন, একটা সময় সুন্দরবনে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় যেতে হয়েছে। কিন্তু র‌্যাবের প্রচেষ্টায় সুন্দরবনের অনেক দস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। তাই আজ আমরা এই বনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করতে পারি। আমি এ মুহূর্তে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করলাম। এসময় প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনে শান্তি ফেরানোয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এসময় প্রধানমন্ত্রী ছাত্তার বাহিনীর প্রধান নাসিম শেখের মেয়ে নাসরিন সুলতানাসহ বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলেন। তাদের দু:খ দুর্দশার কথা শোনেন। পরে প্রধানমন্ত্রী আত্মসমর্পনকৃত দস্যুদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়া যেসব মামলা রয়েছে সেসব মামলা প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকগণকে নির্দেশ দেন। এছাড়াও আত্মসমর্পনকৃত দস্যুদের মধ্যে যাদের ঘর নেই তাদেরকে ঘর এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।


এর আগে আত্মসমর্পণ উপলক্ষে হেলিকপ্টারে করে বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে ছয়টি বাহিনীর ৫৪ সদস্যের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা সুন্দরবনে অভিযান পরিচালণা করেছি। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে সুন্দরবনের দস্যুদের আত্ম সমর্পন করতে বলেছি। অনেকেই আত্মসমর্পণ করেছেন। যার ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা দিয়েছেন। এরপরেও আর কেউ যদি সুন্দরবনে দস্যুতা করে তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।


আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার জন্য আমরা সুন্দরবনে র‌্যাবের ৪টি ক্যাম্প করব। যেখান থেকে সার্বক্ষনিকভাবে সুন্দরবনকে সুরক্ষার জন্য কাজ করা হবে। এরপরেও কেউ যদি সুন্দরবনে দস্যুতা করার দুৎসাহস দেখায় তাহলে তাদেরকে নিশ্চিহ্ণ করে দেয়ার ঘোষনা দেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।


আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. মীর শওকাত আলী বাদশা।


অনুষ্ঠানে বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার হাবিবুন্নাহার, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসাইন মিয়া, র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক হাসান ইমন আল রাজিব, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়, পুলিশ ও প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, আত্মসমর্পনকারী দস্যু ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ ৫ সহ¯্রাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।


এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুন্দরবনের আনোয়ারুল বাহিনীর আট সদস্য, তৈয়াবুর বাহিনীর পাঁচ, শরিফ বাহিনীর ১৭, ছাত্তার বাহিনীর ১২, সিদ্দিক বাহিনীর সাত ও আল আমিন বাহিনীর পাঁচ সদস্য আত্মসমর্পন করেন। এরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ৫৮টি অস্ত্র ও তিন হাজার ৩‘শ ৫১টি গোলাবারুদ জমা দেন। এর আগে বিভিন্ন সময় সুন্দরবনের ২৬টি বাহিনীর ২‘শ ৭৪ জন সদস্য আত্মসমর্পন করেন। আত্মসমর্পনের সময় তারা ৪‘শ ৪টি অস্ত্র ও ১৯ হাজার ১‘শ ৫৩টি গোলা বারুদ জমা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন সময় র‌্যাব অভিযান চালিয়ে সুন্দরবন থেকে ৫‘শ ৭ জন দস্যুকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫‘শ ৫৬টি অস্ত্র ও ৩৩ হাজার ৩‘শ ২৪ টি গোলাবারুদ উদ্ধার করে র‌্যাব। এবং সুন্দরবনে র‌্যাবের সাথে বন্ধুক যুদ্ধে এ পর্যন্ত ১‘শ ৩৫ জন দস্যু নিহত হয়েছেন। এসবের মধ্য দিয়ে আজকে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


আত্ম সমর্পনকৃত দস্যুদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য প্রত্যেক দস্যুকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নগদ এক লক্ষ টাকা, র‌্যাবেরপক্ষ থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা শীতবস্ত্র ও একটি মোবাইল সেট প্রদান করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত