আমদানীকারকদের অভিযোগ

মোংলা বন্দরে ঘুষ ছাড়া বের হয় না গাড়ীসহ অন্যান্য পণ্য

শেখ আহসানুল করিম

আপডেট : ০৫:২৬ পিএম, শনিবার, ১১ আগস্ট ২০১৮ | ১২৫৩

মোংলা বন্দরের জেটি থেকে ঘুষ ছাড়া বের হয় না আমদানীকৃত রিকন্ডিশন গাড়ীসহ কন্টেইনারের বিভিন্ন পণ্য। লাগামহীন ঘুষের পাগলা ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় আমদানীকারকেরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ঘুষের টাকা না দিলে গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্যের ছাড় করণের বিল ভাউচারও পাওয়া যাচ্ছেনা। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘুষ দিয়ে পণ্য ছাড় করেন আমদানীকারকরা। মোংলা বন্দর জেটির অভ্যন্তরের সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানের স্বেচ্চাচারিতায় অতিষ্ঠ হয়ে তার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ করছেন আমদানীকারকরা।


মোংলা বন্দরের একাধিক আমদানীকারক জানান, মোংলা বন্দর থেকে প্রতিদিন ৫০টির কম-বেশি গাড়ী বের হলে সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানকে গাড়ী প্রতি ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হচ্ছে। তাকে সন্তষ্ট বা খুশি না করলে গাড়ী আমদানীকারকদের পক্ষে গাড়ী ছাড়ের বিলপত্র নেয়া অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া জেটির ভিতরে বিদেশ থেকে আমদানীকারকদের কন্টেইনারে আসা বিভিন্ন পণ্য ছাড়াতেও ইবনে হাসানকে ঘুষ দিতে হয়। এটা রীতিমত হয়রানি বলেও বন্দর ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করেছেন। মোংলা বন্দর জেটির অভ্যন্তরের সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানের হাত থেকে মুক্তি পেতে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে বন্দর ব্যবহারকারীরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।


রিকন্ডিশন গাড়ী আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান বারভিডা’র সভাপতি হাবিব্ল্লুাহ ডন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এসব অসাধু ব্যক্তিদের কারণে আবারো মোংলা বন্দর ইমেজ সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখনই এসব ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে মোংলা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন বলেও হুঁশিয়ারী দেন।


বারভিডা’র সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মোংলা বন্দরে গাড়ীসহ বিভিন্ন পণ্য ছাড় করতে যে ঘুষ দিতে হয় সেটা আমাদের সয়ে গেছে। স্পীড মানি দিতে আমাদের বাধ্য করা হচ্ছে। এসব অসাধু কর্তাদের জন্য বন্দর জেটি থেকে গাড়ীর যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পার্সোনাল শাখা সুত্র জানায়, সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানের চাকরীটাই হয়েছে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে। সম্পূর্ণ ভূয়ার উপর ভর করে তার চাকরী চলছে। সুত্র আরো জানায়, তিনি যে সময়ে চাকরীতে ঢুকেছেন সেই সময়ে তার নিজ জেলা কোঠা ছিল না। বিগত ২০১৩ সালে গোপালগঞ্জের কোঠা না থাকলেও তিনি এ কোঠায় কিভাবে ঢুকলেন জানতে চাইলে ইবনে হাসান বলেন, তিনি সে সময় পোষ্য কোঠায় ঢুকেছেন। তবে সে সময়ও (২০১৩) পোষ্য কোঠা ছিল না বলে বন্দরের পার্সোনাল শাখা নিশ্চিত করেছেন।


গাড়ীসহ আমদানীকারকদের অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে মোংলা বন্দর জেটির অভ্যন্তরের সিনিয়র আউটডোর এ্যাসিন্টেট ইবনে হাসানের মোবাইলে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপরও তার সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) প্রনব কুমার রায় বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, চাকরীর বিধিমালা লংঘন করে বন্দরে কেউ চাকরী নিয়ে থাকলে বা কোন আমদানীকারকদের কাছে ঘুষ দাবী করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত