বাগেরহাট জেলার নয় উপজেলায় ৩শ ২৭টি বায়োগ্যাস প্লান্ট

বায়োগ্যাসে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৪:৪১ পিএম, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৭ | ১৫২৪

বায়োগ্যাস

বায়োগ্যাসের সুবিধাকত গ্রামে থেকে শহরের মত।শুধু শ্লোগান নয়, বাস্তবে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে, সুফল ভোগ করছে বাগেরহাটের তিন শতাধিক গরুর খামারি ।বায়োগ্যাসে চুলা জ্বলে। রান্না হয় ধোয়া হয়না।যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সম্মত। বায়োগ্যাসের স্যালারীতে হয় মাছের খাবার ও জৈব সার। আর বায়োগ্যাস বেশি হলে ভাড়াও দেয়া যায়। এতসব গুনের কারণে বায়োগ্যাসে আগ্রহী হচ্ছে বাগেরহাটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরুর খামারিরা।

বাগেরহাট জেলার নয় উপজেলায় ৩শ ২৭টি বায়োগ্যাস প্লান্ট আছে। প্রত্যেকটি প্লান্ট থেকে উপকৃত হচ্ছে মালিকপ। জেলার সদর উপজেলায় ৬০টি, কচুয়ায় ২৬টি, মোড়েলগঞ্জে ৩৮টি, শরণখোলায় ১২টি, মোংলাংয় ৪২টি, রামপালে ১৬টি, ফকিরহাটে ৬০টি, চিতলমারীতে ২৮টি এবং মোল্লাহাটে ৪৫টি বায়োগ্যাস প্লান্ট রয়েছে।

জেলায় তিন শতাধিক বায়োগ্যাস প্লান্ট হওয়ার কারণে পশুর খামার থেকে দূষণের হার কমেছে। জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন হচ্ছে বিষমুক্ত সবজি ফসল।বায়োগ্যাসে রান্নার কারণে কমছে মা ও শিশু রোগ।

ব্যায়োগ্যাস প্লান্টের একমাত্র কাঁচামাল হচ্ছে পচনশীল বর্জ্র। বাগেরহাটের প্লান্ট গুলোতে ব্যবহৃত হয় পশুর বর্জ্র (গোবর)।

যেভাবে তৈরি হয় বায়োগ্যাস প্লান্ট :

খামারের পাশে বা সুবিধামত স্থানে মাটির নিচে একটি ট্যাংকি করা হয়। ট্যাংকির পাশে উপরিভাগে থাকে একটি গোলাকার পাত্র থাকে।যে পাত্রে গোবর বা কাচামাল ফেলা হয়। ঐ পাত্রের সাথে পাইপ দিয়ে ট্যাংকিতে সংযোগ দেয়া থাকে।তার পাশে থাকে আরেকটি হাউস।এ হাউসের সাথেও ট্যাংকির সাথে সংযোগ থাকে।ট্যাংকিতে জমে গ্যাস। অন্য হাউজে বায়োগ্যাসের স্যালারি জমে।

বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বায়োগ্যাস প্লান্টগুলো গরুর খামারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। খামারের মালিকদের পরিবারের প্রয়োজনীয় রান্না হয় এ বায়োগ্যাসেই। ঘেরের মাছের খাবার ও গরুর খাবার রান্নাও হয় এ গ্যাসে। যেসব খামারীদের গরু বেশি তারা পাশের বাড়িতে ভাড়ায় গ্যাসের সংযোগও দিয়েছে।

সদর উপজেলার কোন্ডলা আদর্শ খামারের মালিক শেখ মুশফিকুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমি গরুর খামার করার পরে বর্জ্র নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। আমার মাথায় আসে বায়োগ্যাস প্লান্টের চিন্তা। তখন আমি এ প্লান্ট তৈরি করি। আমার কর্মচারীদের খাবার রান্নার জ্বালানি হয় এ গ্যাস দিয়ে। তারপরও গ্যাস অবশিষ্ট থেকে যায়। তখন পাশের বাড়ির লোকদের একটি গ্যাস সংযোগ দিয়েছি। আর বায়োগ্যাসের স্যালারি (অবশিষ্ট বর্জ্র) শুকিয়ে আমার মৎস্য ঘের ও কৃষিতে ব্যবহার করি।

ভাড়া গ্রহিতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমি গ্যাস সংযোগ দিয়ে একটি চুলা ব্যবহার করি। মাসে পাঁচশত টাকা ভাড়া প্রদান করি। কাঠের জ্বালানির থেকে অনেক কম খরচে আমার রান্নার কাজ হয়ে যায়।


বাগেরহাট শহরের দর্জি ডেইরি ফার্মের মালিক কামরুল দর্জি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমার খামারে ও তার আশেপাশে কোন গন্ধ নাই। খামারের গোবর আমি বায়োগ্যাস প্লান্টে ব্যবহার করি। আমাদের রান্নার সকল কাজ এ গ্যাসে হয়ে যায়। আমার পরিবারের রান্নার জন্য কোন কাঠ ব্যবহৃত হয় না।

বায়োগ্যাসে প্লান্ট স্থাপনে কারিগরি সহযোগিতা প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থার বাগেরহাটের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো: আসাদুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পরিবেশ রা ও দূষনমুক্ত জ্বালানি ব্যবস্থা নিশ্চত করতে আমরা বিনা মূল্যে খামারিদের বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরিতে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করে থাকি। ক্ষেএে সরকারি সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কো¤পানি লিমিটেড (ইডকল) থেকে আমরা একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকা পেয়ে থাকি।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: লুৎফর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পশু খামারের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে গন্ধ ও পরিবেশ দূষন। খামারের বর্জ্র বায়োগ্যাস প্লান্টে ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে না। প্লান্টের গ্যাস ও স্যালারি ব্যবহারে খামারি উপকৃত হচ্ছে।

কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাট-এর উপপরিচালক মো: আফতাব উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বাগেরহাটে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির প্রবনতা বাড়ছে। এটা কৃষি জমি ও ফসলের জন্য উপকারী। কৃষি জমিতে বায়োগ্যাসের স্যালারি সার হিসেবে ব্যবহারে রাসয়নিক সারের ব্যবহার কমেছে। যারা এ সার ব্যবহার করেছে তাদের ফলনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা: অরুন চন্দ্র মন্ডল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, রান্নার জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস ব্যবহারের ফলে মা ও শিশু অনেক রোগ থেকে রা পায়। বায়োগ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে মা ও শিশু মৃত্যুহার কমবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীন পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বায়োগ্যাস ব্যবহারে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ধ্বংস কমে। পরিবেশ নিরাপদ থাকে। পশুর বর্জ্রের সঠিক ব্যবহার হয়। সরকারি উদ্যোগে ব্যাপকভাবে এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট করতে পারলে আর্থিক ও পরিবেশগত দুই দিক থেকেই মানুষ লাভবান হবে। এছাড়াও কমিউনিটি বেজড বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে পারিবারিক অবশিষ্ট বর্জ্র ব্যবহার করা যায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত