অপর পক্ষের দখলের অভিযোগ

১০ বছর পর উম্মুক্ত মংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘ

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৯:১০ পিএম, সোমবার, ২ জুলাই ২০১৮ | ৯৮৭

দীর্ঘ ১০ বছর পর মংলা সমুদ্র বন্দর কেন্দ্রিক দেশী-বিদেশী জাহাজের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের বৃহত্তম সংগঠন মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ উম্মুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে অন্য পক্ষ এটাকে জবর দখল বলে বিভিন্ন দপ্তরের অভিযোগ করেছে। রোববার দুপুর ১টার দিকে মংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘ নামে অন্য একটি নতুন সংগঠন এর কার্যক্রম শুরু করেছে। এ সময় দীর্ঘ ১০ বছর যাবত তালা বন্ধ থাকা এ সংগঠনটি এখানকার অবহেলীত শ্রমিকদের দাবী আদায়ের লক্ষে ভবনটির তালা খুলে দখলে নেয় নতুন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তবে পুর্বের মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের নেতৃবৃন্দরা বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে একে অপরে উপর দোষারোপ করছে। জোর পুর্বক শ্রমিক সংঘ ভবনের তালা ভেঙ্গে তাদের দখলে নেয়ার অভিযোগও দিচ্ছে বিভিন্ন দপ্তরে।


মংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের বর্তমান সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক সেন্টু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, গত ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই সরকারের এক অধ্যাদেশে মংলা ও চট্রগ্রাম বন্দরের ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্তি ঘোষনা করে সরকার। ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্তির পাশা-পাশি মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘসহ সকল শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন বিলুপ্তি হয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় শ্রমিক সংগঠন। শ্রমিক না থাকায় তখন থেকেই এখানকার অবহেলীত শ্রমিকদের বৃহত্তম সংগঠন মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ তালা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর তখনই এখানকার কর্মরত শ্রমিকদের ভাগ্যে নেমে আসে দুঃখ দুর্দশা, শ্রমিকদের পাওনাধী না দিয়ে বিনা টাকায় চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ সরকার দায়ীত্ব গ্রহনের পর যে সমস্ত শ্রমিক বিনা টাকায় চলে গেছে তাদের দাবী অনুযায়ী পাওনাধী পরিশোধের জন্য প্রতি¯্রুতি দেয় স্থানীয় এমপি ও সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরো বলেন, মংলা-রামপাল বাগেরহাট-৩ আসনের এমপি বেগম হাবিবুন নাহান ও খুলনা সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক সরকারের কাছ থেকে ঋণ এনে শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে তাদের পাওনাধী পরিশোধ করে। পরে ২০১৭ সালে মেয়র তালুকদার আবুল খালেক’র সহযোগিতায় মংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘ রেজিঃ নং-২১৪৩ নামে নতুন একটি সংগঠন তৈরী করা হয়। ইতি পুর্বে এই শ্রমিক সংঘ ভবনটি একটি রাজনৈতিক অফিস হিসেবে ব্যাবহার করছিল সাবেক নেতা কর্মিরা। মৃত প্রায় মংলা বন্দর এখন অনেক লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। বেড়েছে এখানকার দেশী-বিদেশী জাহাজে শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্য। তাই আমরা এখানকার খেটে খাওয়া অবহেলীত শ্রমিকদের সেবা দেয়ার জন্য নতুন সংগঠন মাধ্যমে এ ভবনের তালা খুলে কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছি। এখানে কোন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান নয়, সমস্ত শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে সাবেক সাধারন সম্পাদক এ কে এম শাহাব উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী শ্রমিক সংগঠন। ১৯৭২ সালে এই সংগঠন রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত হওয়ার পরে দতার সাথে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন তিনি। তত্বাবধায়ক সরকারের পর বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ৬৬নং শ্রম আইনে (৩) (৫) (৬) (৭) ও (৮) নং উপধারায় মংলা বন্দরে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন বিলুপ্তি ঘটিয়ে একটি ট্রেড ইউনিয়ন করার আইন করেন। উক্ত আইনটি চ্যালেঞ্জ করে মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের প হতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রীট মামলা দায়ের করা হয়, মামলার আলোকে মাননীয় আদালত কেন আইনটি অবৈধ ঘোষনা করা হবে না মর্মে সংশ্লিষ্টদের উপর রুলস জারী করেন। যাহা বর্তমানে বিচারাধীন আছে। তাছাড়াও ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্তি ও ট্রেড ইউনিয়ন গঠন বিষয়ে ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক শ্রম সংশোধন অধ্যাদেশ জারী করা হয়। উক্ত অধ্যাদেশ চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ২টি রীট মামলা দায়ের করা আছে। মামলা নং-৫৬৩৫/২০০৮, ৫৩৩৬/২০০৮। যা আদালতে বিচারাধীন আছে। অপর দিকে মংলা বন্দর কর্তৃপ গত ২০১২ সালের ৫ আগষ্ট স্মারক নং-মবক বিমডশ্রব্যবো/স (ম)/১৫৪ অংশ ১/২০১২-৬৪০-১৪৫৬, তারিখ-২০১২ সালের ৫ আগষ্ট’র মাধ্যমে মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘের অফিস ভবন, মিলনায়তন ও ফিটিং ফিক্সিং সহ যাবতীয় সম্পদ মংলা বন্দর কর্তৃপরে সম্পত্তি শাখায় হস্তান্তর করার জন্য আবেদন করেন।

এ আবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে ১টি রীট মামলা দায়ের করা হয়, মামলা নং-১৩৬৬০। এ মামলাটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের চলতি বছরের ২৭ জুন কার্য তালিকা (কজ লিষ্ট) এর শুনানীর দিন ধার্যছিল। এ মামলা গুলো এখনও চলমান যা নিস্পত্তি না হওয়ায় কোন সংগঠন হওয়ার সুযোগ নেই। তার পরেও একটি নতুন সংগঠনের নামে জোর করে তালাবদ্ধ শ্রমিক সংগঠনের ভবন,মিলনায়তন ও অন্যান্য সম্পদসহ তালা ভেঙ্গে জবর দখলে নেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গত ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাষ্ট্রপতির এক নির্দেশনায় মংলা সমুদ্র বন্দরের ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্তি ঘোষনা করায় এখানকার প্রায় ২০ হাজার শ্রমিকদের সংগঠন মংলা বন্দর শ্রমিক সংঘ ভেঙ্গে যায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত