দূর্নীতির দায়ে চাকুরীচ্যুত জেলা রেজিষ্ট্রারের হাত থেকে বাঁচতে শিক্ষক পরিবারের আকুতি

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৮:২২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০২৩ | ৩২০

জাহানারা আক্তার বেবি (৩৪)। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার চিংড়াখালি ইউনিয়নের উত্তর চিংড়াখালি গ্রামের মৃত হেমায়েতুল ইসলামের মেয়ে। ৮ ভাই বোনের অভাবের সংসারে ৭ম তিনি। অভাবের তারনায় ২০০৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে একটি ভাল চাকুরীর আশায় তৎকালীন জেলা রেজিষ্ট্রার মোঃ ফজলার রহমানের ঢাকার ধানমন্ডিস্থ বাসায় যায় বেবি। এই যাওয়াই কাল হয় তার। দূর্নীতির দায়ে চাকুরীচ্যুত সাবেক জেলা রেজিষ্ট্রার মোঃ ফজলার রহমান বেবিকে চাকুরীতো দেয়নি, বরং বিয়ের প্রলোভনে দিনের পর দিন বেবিকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ বেবির। ফজলার রহমানের বাসা থেকে পালিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি, একেরপর এক মিথ্যা মামলা ও হুমকীধামকি দিয়ে বেবি ও তার পরিবারকে হয়রানি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ বেবির।

জাহানারা আক্তার বেবি বলেন, নুরুজ্জামান নামের এক পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে সরকারি চাকুরীর আশায় মোঃ ফজলার রহমান স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম। বাবা না থাকায়, তাকে আব্বু ডাকতাম। বাসার সব কাজও করে দিতাম। দুই বছর পরে মোঃ ফজলার রহমানের স্ত্রী মারা যায়। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে সংসারের সব ধরণের কাজ করতে হত আমার। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে নানা ধরণের কুপ্রস্তাব দিতে থাকে। রাজি না হলে, বিয়ে করার কথা বলে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমাদের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আমার স্কুল শিক্ষিকা বোন মোসাঃ মনোয়ারা খানমসহ সকলের সাথে তার ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও বিয়ে না করায় ২০১৮ সালে আমি পালিয়ে বাড়িতে চলে আসি। পরিবারের সিদ্ধান্তে মান সম্মানের ভয়ে বিষয়টি কাউকে না জানিয়ে চুপচাপ থাকি। ২০২০ সালে আমার বড়বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাঃ মনোয়ারা খানমের উদ্যোগে আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। বিষয়টি জানতে পেরে মোঃ ফজলার রহমান প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন।

জাহানারা আক্তার বেবি আরও বলেন, ২০২০ সালের ৮ মার্চ ফজলার রহমান তার গাড়ি চালক মোঃ আকিদুলকে দিয়ে আমার বড়বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাঃ মনোয়ারা খানমের কাছে ত্রিশ লক্ষ টাকা পাবে বলে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। এই মিথ্যা পাওনার লিগ্যাল নোটিশে আমার বোনের কোন শাস্তি হবে না, বুঝতে পেরে মোঃ ফজলার রহমানের গৃহপরিচারিকার ভাশুর গোলাম মোস্তফাকে দিয়ে আমার বড় বোনের স্বাক্ষর জাল করে ত্রিশ লক্ষ টাকা পাবে এমন একটি চুক্তি করে। ওই চুক্তি নামা দিয়ে ঢাকা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আমার বোনের নামে ৩০ লক্ষ টাকা পাওনার মামলা দায়ের করেন। ওই ৫দিন কারাভোগের পরে আমার বোন মনোয়ারা খানম জামিনে মুক্ত হয়। যার ফলে আমার বড় বোন চাকুরী থেকে এক বছরের জন্য সাময়িক বরখাস্ত হন। এতেও তিনি থামেননি। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৪ মে ফজলার রহমান নিজে বাদী হয়ে আমার কাছে ৪১ লক্ষ টাকা এবং আমার বোনের কাছে ৪১ লক্ষ টাকা পাবে বলে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। বাগেরহাট মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। তিনি আমাকে ও আমার বড় বোনকে মেরে ফেলার জন্য কয়েক দফায় হুমকি দিয়েছেন। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে, তার রক্ষিতা হয়ে বাঁচতে হবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমি সম্মানের সাথে বাঁচতে চাই, আর কিছু চাইনা। এজন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন এই নারী।


জাহানারা আক্তার বেবির বড় বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাঃ মনোয়াো খানম বলেন, বেবিকে রক্ষিতা হিসেবে রাখতে না পেরে আমাদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে ফজলার রহমান। তার ভয়ে আমার বোন পলাতক জীবন যাপন করছে। ফজলার রহমান একজন দূর্নীতিবাজ লোক। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির অপরাধে ৭টি মামলা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে দূর্নীতির মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। দূর্নীতির মাধ্যমে গড়া বিপুল পরিমান টাকা দিয়ে তিনি মানুষকে হয়রানি করে যাচ্ছেন। আমার ও আমার বোনের বিরুদ্ধে করা সকল মিথ্যা মামলা। হয়রানি করার জন্য ফজলার রহমানের বিচার চাই। স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সাহায্য ভিক্ষা চায় এই অসহায় নারী।

শুধু জাহানারা ও মনোয়ারা নয়, ফজলার রহমান একাধিক বিয়ে করেছেন। মৃত স্ত্রী ছাড়া অন্য সব নারীর সাথেই তিনি করেছেন প্রতারণা। বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে নিজের সন্তানদের সাথেও তার ভাল সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন ফজলার রহমানের নিকট আত্মীয় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নুরুজ্জামান।

তিনি বলেন, চাকুরীচ্যুত হওয়ার পরে ফজলার রহমানের প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষকে হয়রানি করা। তিনি মানুষের সাথে এত বেশি অত্যাচার করেছেন যে ভয়ে নিজ এলাকায় বসবাস করতে পারছেন না। যার কারণে তিনি বাগেরহাট সদরের রাধাভল্বব এলাকায় একাই থাকেন। সে আমাকে ১৩টি মামলা দিয়েছে। সে সন্ত্রাসী দিয়ে আমার বাড়িতে হামলাও চালিয়েছে। এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২২ সালে ফজলার রহমানের বিরুদ্ধে মানববন্ধনও করেছে।


দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর সোমবার দুপুরে বাগেরহাট শহরের জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে মোঃ ফজলার রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় তাকে আদালতের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। জানাযায়, সাবরেজিষ্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার থাকা অবস্থায় দূর্নীতি করে তিনি বিপুল পরিমান টাকা আয় করেছেন। সেই টাকা ও সম্পদ দিয়েই এখন মানুষকে হয়রানি করছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলার রহমান বলেন, জাহানারা আক্তার বেবি ও মনোয়ারা খানম আমার বাড়ির কাজের লোক ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি। আদালতে বিষয়টির সমাধান হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত