মোল্লাহাটে ব্যতিক্রমী ‘ভূমি-হালখাতা’

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ১২:২৯ পিএম, রোববার, ১৫ এপ্রিল ২০১৮ | ১৬৬৩

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা ভূমি অফিসে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমি ‘ভূমি-হালখাতা’। আর হালখাতা অনুষ্ঠান থেকেই শুরু হয় পহেলা বৈশাখ উদযাপন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটা ছিল পুরোপুরিই ব্যবসায়িক ব্যাপার। ব্যবসায়ীরা তাঁদের পুরোনো হিসাব সম্পন্ন করে নতুন হিসাবের খাতা খুলতেন। এ অনুষ্ঠানের নাম ছিল হালখাতা (নতুন খাতা)। হালখাতা উপলে তাঁরা নতুন-পুরোনো খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টিমুখ করাতেন ও নতুন করে তাঁদের সঙ্গে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক স্থাপন করতেন। চিরাচরিত এই উৎসব আর ঐতিহ্যকে ধারণ করে বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলা ভূমি অফিসে শুরু হয়েছে ব্যতিক্রমি ‘ভূমি-হালখাতা’।


ঐতিহ্যবাহী সেই হালখাতার আদলে ভূমি উন্নয়ন কর ও অন্যান্য ভূমি রাজস্ব আদায়ে ভূমি-হালখাতা পালনের এই আয়োজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল আলমের। হালখাতা উপলে অফিস চত্বর সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। পথে পথে করা হয় আল্পনা। জমির মালিকরাও ভূমি উন্নয়ন কর দিয়ে রশিদ (দাখিলা) সংগ্রহের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের আপ্যায়ন গ্রহণ করছেন।


প্রথম বারের মত ভূমি অফিসে এমন হালখানা পালনে এসেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ সাধারণ মানুষ। অনুষ্ঠানে আগতদের দেশি ফল, বাতাসা, কদমা, মুরলি দিয়ে আপ্যান করা হয়।

মোল্লাহাটে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, জনগনের জন্য সেবা প্রাপ্তি সহজ করতে ব্যাতিক্রমী কিছু করার ভাবনা থেকে হালখাতা করার চিন্তা আসে। আমার চেষ্টা ছিল ঐতিহ্যকে লালন করে কিভাবে সেবা প্রদান আর রাজস্ব আদায় সহজ করা যায়।

সরকারি ছুটির দিনেও অফিসে এসে সবাই কাজ করছেন। সাধারণ জনগনের কাজ থেকেও খুল ভালো সাড়া পেয়েছি। ভূমি অফিস নিয়ে অনেকের মাঝেই একটি নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সেবা পেতে হয়রানি, দালালের কথা সবাই বলে। আমি এই ধারণা ভাঙতে চেয়েছি। আর এই কাজে আমি অফিসের সহকর্মীসহ সবার সহযোগীতা পেয়েছি।


তিনি বলেন, ‘আমরা ঐতিহ্যকে ভুলে গিয়ে উন্নয়ন করতে চাই না। ঐতিহ্যকে বুকে ধারন করে সবাই মিলে যদি উন্নয়নের পথে হাটতে চাই।’
খাজনা পরিশোধ করেন স্থানীয় উদয়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ হায়দার মামুন। তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এভাবে কখনও খাজনা দেই নি। ভূমি-হালখাতায় এসে বছরের প্রথম দিনে আমি আমার জমির খাজনা দিতে পেরে খুব আনন্দিত।

ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করে আব্দুল আলিম মোল্লা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এতো সুন্দর পরিবেশে খাজনা দিতে পেরে ভালো লাগছে। এখন হালখাতা খুব এটা হয় না। আমি আমার ছেলে মেয়েদেরও নিয়ে আসছি। খুব ভালো লাগছে। সরকারি অফিসে দ্রতই কাজ হয়েছে। আবার তারা আপ্যায়নও করলো।

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর আলম সানা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এখনকার ভূমি সহকারী কমিশনার নিজ উদ্যোগে এই আয়োজন করেছেন। আমাদের হালখাতার ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনে তার এই উদ্যোগ সবাইকে কর প্রদানে উৎসাহী করবে। আমরা আশা করি প্রতিবছর এই উদ্যোগ নেওয়া হলে খুব ভালো হবে। পাশাপাশি এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়া হলে সরকারে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত