উন্নত জাতের সুপারির চারা বিক্রি করে 

চাষী ইসহাকের ভাগ্যবদল

পি কে অলোক,ফকিরহাট

আপডেট : ১০:১০ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই ২০২৩ | ৬৮০

ফকিরহাটের পাইকপাড়া গ্রামের খান জাহান আলী নার্সারির পরিচালক মাওলানা মোঃ ইসহাক আলী উন্নত জাতের সুপারির চারা বিক্রয় করে তিনি এখন বেশ স্বাবলম্বি হয়েছেন। তাঁর দেখা-দেখি এখন অনেক চাষিই উন্নত জাতের সুপারির চারা রোপন করে স্বাবলম্বি হওয়ার চেষ্টা করছেন। নার্সারি চাষিরা যদি এধারা অব্যাহত রাখেন তাহলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পাশা-পাশি তারা নিজেরা স্বাবলম্বি হবেন বলেও অনেকের ধারনা।


জানা গেছে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত জাতের সিঙ্গাপুর ও বার্মিজ জাতের সুপারির চারা উৎপাদন করে তিনি এখন বেশ স্বাবলম্বি হয়েছেন। তার উৎপাদিত নার্সারির সুপারির চারা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মাওলানা মোঃ ইসহাক আলীর মতো ওই এলাকার অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এ নার্সারিতে।

মাওলানা মোঃ ইসহাক আলী বলেন এবছর সাড়ে ৮খন্ড জমিতে তিনি সুপারির নার্সারি করেন। বীজ, সেচ, পরিচর্যা ও পরিবহন শ্রমিক সহ মোট ব্যায় হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। শুধুমাত্র দুইমাসে ওই চারা বিক্রি করে তিনি প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। তিনি বলেন, একটি সুপারির চারা উৎপাদন করতে খরচ হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সেই চারা ১২ থেকে ২৪ মাসের মাথায় বিক্রি হয়, প্রতি পিচ ৫০-৬০ টাকায়।’তিনি বলেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে তিনি উন্নত জাতের সুপারির বীজ কালেকশন করেন এবং পুরানো চাষীদের পরামর্শে সুপারির চারা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।


সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, তিনি নিজে নার্সারির বাগানে কাজ করছেন। সেখানে মাটির বেডে বীজ বপন ও বেড প্রস্তুতের কাজ তিনি নিজেই করছেন। পরপর বপন করা হয় সুপারির বীজ। সেই বীজ থেকে চারা হয়। ওই চারা ছয় মাস থেকে এক বছরের মাথায় বিক্রি শুরু করা হয়। তিনি বলেন,‘নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। এতে কোনও লোকসান নেই যদি বুঝে সঠিক নিয়মে বীজ বপন করা যায়।

এলাকাবাসী জানান, নার্সারি করে ইসহাক সাহেব ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। তার উন্নত জাতের চারা ক্রয় করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত কৃষকরা এখানে আসেন। শুধু তাই নয়, তার ৮ টি বাগানে এলাকার বেকার শ্রমিকদের কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ জন শ্রমিক তার নার্সারিতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

শ্রমিক মোঃ রফিকুল ইসলাম (৫৫ ) বলেন, ‘আগে ভাবতে হতো, কার বাড়িতে কাজ করবো, কীভাবে বাজার খরচের টাকা পাবো। কিন্তু এখন আর সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না। প্রতিদিন কাজ পাই। সন্ধ্যা হলে হাজিরার টাকা নিয়ে বাজার থেকে চাল-ডাল কিনে বাড়ি নিয়ে যাই। ওই বাগানের শ্রমিক মোঃ জাকির বিশ্বাস ( ৫০) একই কথা বললেন।


মোঃ ইসহাক আলী বলেন,দক্ষিন বঙ্গের মধ্যে বাগেরহাট জেলায় অতিথি আপ্যায়নে পান সুপারির বিকল্প নেই। বিশেষ করে বিয়ে বাড়ি, মুখেভাত সহ নানা অনুষ্ঠানে পান সুপারি লাগেই। তাই এই অঞ্চলে সুপারি চাষ লাভজনক। খুচরা ক্রেতাদের পাশাপাশি পাইকাররা আমার এখান থেকে সুপারির চারা কিনে নিয়ে যান।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, ছোট বড় কয়েকটি নার্সারি রয়েছে এ উপজেলাতে। সামাজিক বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পান সুপারি নারকেল মানুষকে আর্থিক স্বচ্ছলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সুপারির নার্সারির সংখ্যা বাণিজ্যিক ভাবে বাড়াতে মাঠপর্যায়ে কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত