মুখ থুবড়ে পড়েছে মোংলায় প্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ১০:০১ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩ | ৩৭২

জনবল সংকট আর কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় বন্ধ হতে যাচ্ছে ১৫০ কোটি টাকার ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি। ২০১৯ সালে মোংলা পোর্ট পৌরসভা পানি সংরক্ষন পুকুরে শুরু হওয়া দেশের প্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্লানটি থেকে বিদ্যুৎ উদপাদনে গেলেও এক বছরের মাথায় কারিগরী ত্রুটির কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ প্রকল্প থেকে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রীডে জোগান দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্পটি চালু করতে মন্ত্রনালয়ের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর সুত্রে জানায়, মোংলা পোর্ট পৌরবাসীর পানির চাহিদা মিটাতে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যায় ৮৪ একর জমির উপরে ২টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পানি সংরক্ষনাগার) তৈরী করা হয়। সেই পুকুর দুটিতে ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২০১৯ সালে ২৩ জুন মোংলা পোর্ট পৌরসভার সাথে ভারতের প্রিমিয়ার সোলার পাওয়ারটেক প্রাইভেট লিঃ ও বাংলাদেশের সোলার ইপিসি ডেভলপমেন্ট লিঃ’র সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

ওই বছর ১৪ অক্টোবর প্রকল্প থেকে প্রথমে ২৫ কোটি টাকা ব্যায় পরিক্ষা মুলক ভাবে দুই মেগাওয়াট ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ থেকে পানির প্রকল্প পরিচালনা ও পৌর কর্তৃপক্ষ এলাকায় তাদের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে জাতীয় গ্রিডে সংযোজন দেয়া হয়। সর্ব শেষ ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে কারিগরী ত্রুটি ও লোকবল সংকটের কারণে তা বন্ধ হয়ে যা সম্পুর্ন বন্ধ হয়ে যায়। কথা ছিল চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাকি ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরুর ২ বছরের মধ্যে আরো ১৩ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ব্যবহারের পর উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা আর হচ্ছে না। প্রকল্পটি চালু থাকলে পৌরবাসী সহ সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগকেও সহায়তা করা সম্ভব হতো।



জানা গেছে, সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার তুলনায় এটি হবে আরও সাশ্রয়ী। এর ফলে পানিও কম বাষ্পীভূত হবে। এতে প্রচুর পরিমাণ পানি জলধারেই থেকে যাবে। খরা মৌসুমে জলধারে পানির সংকটের কারণে কৃষিকাজ সহ বিভিন্ন কাজে যে সমস্যা হয়, এরও অনেকটা সমাধান সম্ভব হবে এ সোলার প্যানেল প্রকল্পটি চারু থাকলে।


মোংরা পোর্ট পৌরসভার মেয়র শেখ আঃ রহমান বলেন, দেশের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প এটি। শুরুতে ২০১৯ সালে ভাসমান এ সৌর প্যানেল নির্মাণ করে ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছিল। উৎপাদিত সেই বিদ্যুৎ দিয়ে পৌরসভার পানির প্রকল্পের মোটরপাম্প চালানো হচ্ছিল। ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এই প্রকল্পের কাজ করার কথা ছিল, এ জন্য ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় সেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। প্রকল্পটি চালু থাকলে এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় ড্রিডে যোগ করা সম্ভব হতো। তবে প্রকল্পটি পুর্নাঙ্গভাবে চালু করতে এবার ভারত নয় চিনা কোম্পানীর সাথে যোগযোগ করা হচ্ছে। অচিরেই চালু হবে দেশের প্রথম ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল। যাতে বছরে প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা সাশ্রয় হবে পৌর কর্তৃপক্ষের বলে জানায় তিনি।



এ বিষয়ে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) মোংলার আবাসিক প্রকৌশলী এইচ এম ফরহাদ হোসেন বলেন, ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চালু হলে বিদ্যুতের কিছুটা ঘাটতি কমবে। দেশের পরিবেশ ও সুন্দরবন সুরক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে মোংলায় ভাসমান সৌর বিদ্যুৎ ও সোলার প্যানেলটি চালু কার জরুরী বলে মনে করেণ এখানকার স্থানীয়রা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত