চাদঁপাই রেঞ্জের বিতর্কিত সেই বনকর্মকর্তা প্রত্যাহার

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ১২:০৬ এএম, রোববার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩ | ২৯১

বহু ঘটনার মদদ দাতা সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মাহবুব হাসানকে অবশেষে মোংলার চাদঁপাই রেঞ্জে যোগদানের ১মাস ৭দিনের মাথায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) তাকে মোংলা চাদঁপাই রেঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় (বাগেরহাট) দপ্তরে নেয়া হয়েছে। গত ৭ মার্চ রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগদান করেছিল। তার পর থেকে বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে সর্ব শেষ গত শুক্রবার (৭এপ্রিল) সুন্দরবনের করমজলের একটি খালে মাছ ধরতে যাওয়া ৪ জেলের মধ্যে এক জেলেকে পিটিয়ে খালে ফেলে দেয়ার ঘটনায় ওই জেলের মৃত্যু হওয়াতেই এ বন কর্মকর্তাকে এখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে ১ মাস ৭দিনে তিনি বেশ কয়েকটি ঘটনায় সমালোচিত হয়েছিল।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় দপ্তরের গোপন তথ্য সূত্রে জানা যায়, চিলা গ্রামের হিলটন নাথ নামের এক যুবক মোংলা ইপিজেডে চাকরী করতো। কিন্ত ছুটি পেলে বড় ভায়ের সাথে পশুর নদীতে মাছ ধরতো হিলটন। গত ৭ এপ্রিল শুক্রবার ছুটির দিনে বড় ভাই সাগর নাথের সাথে সুন্দরবনের করমজলের ৮নম্বর খালে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন ছোট ভাই হিলটন নাথ। ওই সময় সাগর নাথের সাথে তার ছোট ভাই ছাড়াও আরো দুইজন জেলে ছিলেন। এদিন গভীর রাতে করমজলের ওই খালে অভিযান চালান পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জে সহকারী বনসংরক্ষক মোঃ মাহবুব হাসানের নেতৃত্বে বন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন বনরক্ষিরা। অভিযান চালিয়ে সাগর নাথের জেলে নৌকা ঘিরে ফেলেন বনবিভাগের অভিযানকারীরা।

এরপর ওই নৌকাতে উঠেই বনবিভাগের স্প্রিট বোট ড্রাইভার রাজা, বিএম তুহিন হাওলাদার ও সেলিম সরকার সহ কয়েকজন বন রক্ষিরা নৌকায় উঠে জেলেদের বেদম মারপিট শুরু করে। তখন মঞ্জু রাজা সহ অন্যান্য বনরক্ষিরা সাগরের ছোট ভাই হিলটন নাথকে খালে ফেলে দেন। এরপর থেকে নিঁখোঁজ হন হিলটন। নিঁখোজের ৫দিন পর প্রথমে জোংড়া ফরেষ্ট ঘাটে লাশটি ভেসে উঠলে কৌশলে ওখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন সহ ৪জন বনরক্ষি কৌশলে লাশটি সরিয়ে রাখে। এর একদিন পর করমজলের বনের ভিতর থেকে গত বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) রাতে হিলটনের লাশ উদ্ধার হয়। লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে হিলটনের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দাকোপ থানা পুলিশ। শুক্রবার বিকেলেই হিলটনের লাশের দাফন সম্পন্ন হয়েছে তার নিজ বাড়ীতেই। তবে এ ঘটনা নিয়ে শনিবার দুপুরে খুলনার দাকোপ থানায় হত্যা মামলা দায়েরের জন্য হিলটন নাথের মা ও পরিবারের স্বজনরা সেখানে অবস্থান করছে।

এ বিষয়ে খুলনার দাকোপ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উজ্জল কুমার দত্ত বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে, যখন চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে তখনই জানা যাবে হিলটন নিহতের মুল ঘটনা। তবে এ ঘটনায় শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা থানায় অবস্থান করছে এবং মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ মাহবুব হাসানকে প্রত্যাহারের বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, প্রশাসনিক কারণেই এসিএফ মাহবুব হাসানকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। তাকে বদলি করে শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ে এসিএফের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, আর শরণখোলার এসিএফকে চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।


তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনবিভাগের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, হিলটন নিহতের ঘটনা ছাড়াও জেলেদের উপর হামলা গুলী বর্ষন ও মারধর, জোর পুর্বক বিষ ও হরিণের ফাঁদ দিয়ে নিরিহ জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী সহ বেশ কয়েকটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ মাহবুব হাসানকে বিভাগীয় দপ্তরে ক্লোজড করে নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ক্লোজড করার একটি বড় কারণ হলো জেলহাজতে থাকা হিলটনের ভাইসহ অপর জেলেরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, অভিযানের রাতে রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান’র নির্দেশনায় বনবিভাগের স্প্রিড বোট ড্রাইভার রাজা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নৌকা থেকে হিলটনকে খালে ফেলে দেন। এতে হিলটন নিখোঁজ হন, নিখোঁজের ৬দিন পর লাশ উদ্ধার হলে বৃহস্পতিবার এসিএফ মাহবুবকে বিভাগীয় দপ্তরে (ক্লোজড) করে আনা হয়েছে।

চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয়ে যোগদানের এক মাস ৯ দিন পর অভিযানের নামে নিরীহ জেলেদের উপর কয়েক দফায় হামলা ও ফাঁকা গুলি ছোড়াসহ নানা কর্মকান্ডে ব্যাপক সমালোচনায় আসেন এসিএফ মাহবুব হাসান। হিলটন নিহতসহ বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য জেলেদের উপর নির্যাতনের কারণে জেলেদেরও দাবী ছিল এ বন কর্মকর্তাকে এখান থেকে বদলির। অবশেষে সেই বন কর্মকর্তা প্রত্যাহার হলেও যারা হিলটন নিহতের ঘটনায় দায়ী তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তাদের (স্প্রিড বোট ড্রাইভার মঞ্জু রাজা, বিএম তুহিন হাওলাদার ও সেলিম সরকার ও জোংড়ার ওসি আলমগীর হোসেন সহ ওই অফিসের লাশ গুম করা ৪জন বনরক্ষি) তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিচারের দাবী জানিয়েছেন হিলটনের বাবা মিঠুন নাথসহ স্থানীয় ভুক্তভোগী জেলেরা। তবে রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত