সুন্দরবনে বনদস্যুর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি মিলেছে অপহৃত ১৫ জেলের

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৭:২৩ পিএম, বুধবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২২ | ৩০৮

বাগেরহটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে নতুন ‘বনদস্যু নয়ন বাহিনী’র হাতে দুই দফায় অপহৃত ১৫ জেলে সুন্দরবনের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এদের মধ্যে ১২ জন জেলে ২ রাখ ১০ হাজার টাকা মুক্তিপন দিয়ে বনদস্যু নয়ন বাহিনীর আস্তানা থেকে ছাড়া পেয়েছেন বলে দাবী করেছে এসব জেলে ও তাদের স্বজনেরা। বুধবার ভোররাতে পৃথক ৩টি জেলে নৌকায় করে ৩ জন জেলে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুরে ও ৪ জন জেলে সোনাতলা গ্রামে এবং ৮ জন জেলে মোংলা উপজেলার চাদপাঁই এসে পৌছায়। এরপর বিশেষ উদ্ধার অভিযানে থাকা শরণখোলা ও মোংলা থানা পুলিশ এসব জেলেদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। জিম্মিদশায় থাকা এসব জেলেদর মধ্যে মুক্তিপন দিতে না পারায় বনদস্যুদের মারপিটে আহত ৩ জনকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

বনদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেরা জানায়, মঙ্গলবার রাতে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হরিণটানা এলাকার একটি খালে তাদের ছেড়ে দেয় বনদস্যু নয়ন বাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে তারা সারারাত নৌকা বেয়ে বুধবার ভোরে লোকালয়ে এসে পৌছান। নয়ন বাহিনী নামে নতুন এই দলটির ৭ জনের কাছে ২টি পাইপগান ও বেশ কয়েকটি দা রয়েছে। এই বনদস্যু দলের কাছে এখনও ৩ লাখ টাকা মুক্তিপনের দাবীতে একটি ফিশিং ট্রলারসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন জেলে জিম্মি রয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তি পাওয়া এসব জেলেরা।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে প্রথম অপহরনের ঘটনায় নতুন বনদস্যু বাহিনী সদস্যরা সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হরমাল খাল ও বেরির খালে কাঁকড়া শিকার করার সময় হামলা চালিয়ে ১২ জেলের প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে মুক্তিপন দাবীতে অপহরণসহ ৭ মন কাঁকড়াসহ অন্যান্য মালামাল লুটে নেয়। অন্য দিকে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে দ্বিতীয় অপহরনের ঘটনায় একই নয়ন বাহিনীর সদস্যরা চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর চৌরি অফিস সংলগ্ন আলকি এলাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা মুক্তিপণের দাবীতে ৩ জেলেকে অপহরনের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকার মাছ লুটে নিয়ে।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া আহত এই ৩ জেলেরা হচ্ছেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমার সোহেল মল্লিক (২৮), মোংলা উপজেলার বাজিকরখন্ডের আসাদুল শেখ (৩৫), রামপাল উপজেলার বেতকাঠা গ্রামের হানিফ হাওলাদার (৪৫)। এছাড়া শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের ৪ জেলের প্রত্যেকে ১০ হাজার করে টাকা মুক্তিপণ দিয়ে একই সময়ে ছাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তি পাওয়া এই ৪ জেলে। মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া এই ৪ জেলেরা হচ্ছেন, সালাম হাওলাদার (৬৫), ইমাম খান (২৫), সোলেমান হাওলাদার (৩০) ও ইউসুফ হাওলাদার (৩৫)।


অপরদিকে মুক্তিপণ দিয়ে বুধবার ভোরে মোংলা উপজেলার চাঁদপাই এলাকায় ফিরে আসা জেলেদের দুপুরে মোংলা পুলিশ উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে নিয়েছে। এই ৮ জেলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্য নাসির শেখ, সোহরাব শেখ, ফারুক খান ও শেখ মো. মারুফ বিল্লাহ। মুক্তি পাওয়া এই ৮ জেলেরা হচ্ছেন, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বুঝবুনিয়া গ্রামের আকরাম শেখ (৪২), রফিকুল খান (৩৫), রূপসা উপজেলার আলি শিকদার (৪৮), বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার দক্ষিন হলদিবুনিয়া গ্রামের মিলন শেখ (২৩), আনিস শেখ (২২), বৈদ্যমারী গ্রামের শুকুর আলী ব্যপারী (৩০), মনির ব্যপারী (৩৫) ও রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের বকতিয়ার ব্যাপারী (৩৫)। তবে, মোংলা থানা ভারপ্রাাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দাবী করেছেন, পুলিশের বিশেষ অভিযানেই এসব জেলেদেরকে উদ্ধার করেছে।


এদিকে বনদস্যুদের কবল থেকে জেলে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে বুধবার দুপুরে শরনখোলায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন বাগেরহটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক। পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের জানান, সুন্দরবনে জেলে অপহরণের খবর জানার সাথে সাথে মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়। উদ্ধারকৃত জেলেদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে বনদস্যুদের গ্রেফতার করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী সুন্দরবনকে বনদস্যু মুক্ত রাখতে পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত