স্কুলের সরকারী বরাদ্ধের টাকা লুটপাটের ঘটনা তদন্তে শিক্ষা অধিদপ্তর 

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১০:৫২ পিএম, মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর ২০২২ | ৪৪৯

মোংলায় ৭১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারী বরাদ্ধের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্নসাত ও লুটপাটের ঘটনায় সরেজমিনে তদন্তে এসেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গঠিত ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে প্রতিটি স্কুলে গিয়ে তদন্ত করেন তারা। সরকারের বিভন্ন দপ্তরে এমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তার সুত্রধরে ৭১ টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সকল সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা অধিদপ্তর। কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সঠিক তদন্তে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী স্থানীয়দের।

মোংলা উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, গেল অর্থ বছরে মোংলা উপজেলার ৭১ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কার, ক্রিড়া সামগ্রী ক্রয় ও স্লিপের জন্য বরাদ্ধ হয় প্রায় ২ কোটি টাকারও বেশি। সংস্কার কাজ শেষ দেখিয়ে বরাদ্ধের ওইসব অর্থ উত্তোলন করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ব্যাংক একাউন্টে জমা করেন গেল জুন মাসের শেষের দিকে। শুধু চলতি অর্থ বছরের নয়, গত তিন অর্থ বছরের বরাদ্ধের প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আত্নসাত করেছে। পরে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের সহায়তায় বরাদ্ধের এমন নয়ছয় করে তরীগড়ি করে নিজ ইচ্ছায় শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত পোদ্দার অন্যাত্র বদলি হয়ে যায়।

তবে স্থানীয় বাসিন্ধা, অভিবাবক ও স্কুল কমিটির সভাপতিরা বলছেন, মুলত সরকারী বরাদ্ধের টাকা নাম মাত্র কিছু খরচ করে বাকী টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন, সদ্য বদলি হওয়া টিইও সুমন্ত কুমার পোদ্দার, ৩জন সহকারী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী সহ ৭১টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা।

এসকল ঘটনা নিয়ে অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগে তিন অর্থ বছরের বরাদ্ধের অর্থ খরচের বিবরণ দেখার জন্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগীয় উপ-পরিচালক। মাগুরা জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বাবুল আক্তারকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে তদন্ত করেন।

এসময় শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত পোদ্দার, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গুরু দাশ বিশ্বাস, প্রস্পজিৎ মন্ডল ও শাহিনুর রহমান মোড়ল, উপজেলা প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান ও ৭১টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে তদন্তের আওতায় এনে তদন্ত শুরু করেছে তারা। তবে সরকারী টাকা আত্নসাতের বেশীর ভাগই কারসাজী ও সহায়তা করেছে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পুস্পজিৎ মন্ডল ও শহিনুর রহমান মোড়ল। তাদের বিরুদ্ধে ইতি পুর্বে বেশ কয়েকটি অভিযোগ হয়েছিল কিন্ত ক্ষমতার বলে কোন ব্যাবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।


নিয়মানুযায়ী সরকারী বরাদ্ধের টাকা দিয়ে স্কুল সংস্কার বা অন্যান্য কাজ করতে হলে প্রথমে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা প্লান তৈরী করতে হবে। এর পর কাজ সম্পুর্ন হলে ওই প্রকৌশলীর ছাড়পত্র নিয়ে সরকারী এ টাকা উত্তোলন করার নিয়ম থাকলেও সহকারী প্রকৌশলীর স্বাক্ষর জাল করে ছাড়পত্র দিয়ে সম্পুর্ন টাকা উত্তোলন করেছে প্রধান শিক্ষকরা বলে অভিযোগ রয়েছে।


এদিকে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন্ত পোদ্দার বলছেন, উপজেলা প্রকৌশলী আলিমুজ্জামানের ছাড়পত্র পেয়েই সকল প্রধান শিক্ষককে তাদের স্কুলের সরকারী বরাদ্ধের টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। স্কুল সংস্কারের কাজ হওয়া বা না হওয়ার সকল দায়ভার উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের।


অন্যদিকে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আলিমুজ্জামন বলেন, শিক্ষা অফিস থেকে প্লানের জন্য বলা হলে তাদের স্কুলগুলোর কি কি কাজ প্রয়োজন তার এক কপি প্লান তৈরী করে দেয়া হয়েছে। তবে কাজ শেষ হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তারা কিছুই জানেনা এবং কোন ছাড়পত্রও দেয়া হয়নি।

অপরদিকে, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা লাবিব হোসাইন বলেন, একটি প্রিন্ট করা চিঠিতে আমার স্বাক্ষর জাল করে সরকারী টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর নিদের্শনায় কাজ দেখাশুনা করতে পারি, কিন্ত ছাড়পত্র দেয়ার কোন বৈধতা আমার নেই এবং আমার হাত থেকে কোন ছাড়পত্র দেয়া হয়নি।



তদন্তকারী প্রতিনিধি দলের প্রধান ও মাগুরা জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ বাবুল আক্তার বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় আমাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বিভাগীয় কর্মকর্তার আদেশে মোংলার ৭১টি স্কুলের তিন অর্থ বছরের সরকারী বরাদ্ধের কাজ সরেজমিনে তদন্ত করছি। এর পর এর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। অভিযোগ প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নিবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বলে জানায় প্রতিনিধি দলের প্রধান।


মোংলা উপজেলার ৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩ হাজাহর ৫৪২ জন শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। কোমল মতি এ সকল শিশুদের গড়ে ওঠার প্রথম স্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর এ বিদ্যালয় গুলোকে দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত করার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী মোংলা বাসির।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত