রাতের পালায় পণ্য খালাস শুরু

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর প্রথম জাহাজ মোংলা বন্দরে

মাসুদ রানা, মোংলা 

আপডেট : ০৯:৩৩ পিএম, শনিবার, ৬ আগস্ট ২০২২ | ৫৭৪

পণ্য বোঝাই দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাবাহী “এমভি উহইওন হোপ” নামের একটি বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের যন্ত্রাংশের প্রথম চালান নিয়ে ভিড়েছে মোংলা সমুদ্র বন্দরে। শনিবার (৬ আগষ্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে পন্য খালাসের জন্য মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর জেটি এলাকায় এসে নোঙ্গর করে এ জাহাজটি। বিদেশী বানিজ্যিক এ জাহাজটি রেল সেতুর পণ্য নিয়ে ভিয়েতনাম’র হাইফং বন্দর থেকে গত ২৫ জুলাই ছেড়ে আসে যা মোংলা বন্দরে পৌছাতে ১২ দিন সময় লেগেছে বলে জানায় স্থানীয় শিপিং এজেন্ট কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে জাহাজটি খালাস করতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে বলে শ্রমিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে।


বন্দরের হারবার বিভাগ জানায়, বন্দর উন্নয়ন, অগ্রগতি আর আমদানী-রপ্তানী পন্য খালাস দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে মোংলা সমুদ্র বন্দর, দিনে দিনে জাহাজ আগমনের সংখ্যা বাড়ছে, যাতে বৃদ্ধি পাবে সরকারের রাজস্বও। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ ও মেট্ট্রোরেলের পন্য খালাসের পর এবার বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর পণ্য খালাসের জন্য প্রথম চালানের যন্ত্রাংশ নিয়ে জাহাজ এসছে মোংলা বন্দরে।


ভিয়েতনাম’র হাইফং বন্দর থেকে গত ২৫ জুলাই ছেড়ে আসা জাহাজটি ১২দিন পর শনিবার দুপুরের দিকে সাগর মোহনা ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকায় পৌছায়। প্রথম চালানের এ জাহাজে ২৬৭টি প্যাকেজে বিভিন্ন পন্য রয়েছে। বন্দরের নিজস্ব পাইলটের মাধ্যমে জাহাজটি বিকাল সাড়ে ৫টায় এসে পণ্য খালাসের জন্য বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়ে। দক্ষিন কোরিয়ার পতাকাবাহী ১৩১. ৯০ মিটারের জাহাজটির গভীরতা ৬.৯ মিটার। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নতুন নির্মান প্রকল্পের যন্ত্রাংশ নিয়ে মোংলা বন্দরে আসা এটি প্রথম জাহাজ। এর আগে ১১টি বানিজ্যিক জাহাজ এসেছে তা চট্ট্রগ্রাম বন্দর থেকে কালাস করা হয়েছে। আর এই প্রথম মোংলা বন্দর ব্যাবহার করতে শুরু করেছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর যন্ত্রাংশ আনা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তারা।


এ সেতুর জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করা সকল পণ্য খালাস হবে মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে বলে জানায় জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজন্ট মেসার্স হক এন্ড সন্স’র প্রতিনিধি। এ জাহাজে করে ২৬৭ টি প্যাকেজে মোট ২ হাজার ৩৫০ মেঃ টন যন্ত্রাংশের মধ্যে পাইপ, স্টিল ট্রাস সহ বিভিন্ন প্রকারের মেশিনারিজ পণ্য রয়েছে। মোংলা পণ্য খালাসকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বি এন্ড এম রহমান কোম্পানী লিঃ এর দক্ষ শ্রমিক দিয়ে পণ্যগুলো বার্জে খালাস করা হবে। পরে নেয়া হবে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মান স্থানে। বার্জে বোঝাই করে এ পণ্যগুলো নদী পথে পৌছাতে সময় লাগবে ৮/১০ দিন।

স্থানীয় শিপিং এজেন্ট, হক এন্ড সন্স কোম্পানী লিমিটেড’র জেনারেল ম্যানেজার ক্যাপ্টেন মোঃ জিয়াউল হক বলেন, মোংলা বন্দরে জাহাজ জট নাই এবং একানে পণ্য খালাস করতে জাপানের প্রতিনিধিরা আগ্রহ প্রকাশ করায় এই প্রথম বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর পণ্য নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার পতাকাবাহী “এমভি উহইওন হোপ” নামের বিদেশী বানিজ্যিক এ জাহাজটি মোংলা বন্দরে আনা হয়েছে। প্রতি মাসে একটি করে জাহাজ আসবে যা মোংলা বন্দর দিয়েই খালাস করা হবে বলে জানায় তিনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, জাহাজটিতে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর দুই হাজার ৩৫০ মেঃ টন পণ্য রয়েছে যা শনিবার রাতের পালা থেকে খালাস কার্যক্রম শুরু করা হবে। রেল সেতুর জন্য আনা এ পন্যগুরো খালাস করতে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগবে। আর খালাসকৃত পণ্য প্রথমে বার্জে রাখা হবে, পরে নদী পথে নিয়ে সংযুক্ত করা হবে ঢাকার নতুন নির্মানাধীন বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে।

বিশ্ব অর্থনৈকিত টালমাটাল পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরে জাহাজের আগমন স্বাভাবিক রয়েছে। পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় ঢাকা সহ দেশের রাজধানী সহ বিভিন্ন অঞ্চলের আমদানী-রপ্তানীকারক ব্যাবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যাবহার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার সুফলে এখন নতুন নতুন আমদানী-রপ্তানীকৃত পণ্যের জাহাজ ভিড়ছে মোংলা বন্দরে। আর দেশের সরকারের গ্রহন করা বড় মেঘা প্রকল্পগুলোর আমদানীকৃত পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে দিয়ে খালাস হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার মোংলা বন্দরে আসছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর দুই হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন যন্ত্রাংশ বোঝাই “এমভি উহইওন হোপ” নামক এ জাহাজ। এ প্রতিষ্ঠানের আমদানীকারক ব্যাবসায়ী প্রতি মাসেই একটি করে জাহাজ মোংলা বন্দর দিয়ে পণ্য খালাস করবে বলে জানায় বন্দরের এ কর্মকর্তা।

২০২০ সালে শুরু হওয়া বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ ২০২৫ সালে ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। যার সর্ব শেষ ব্যায় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত