মোংলায় ঠিকাদারের ঘাতক স্কেভেটর নষ্ট করে দিলো ১২ একর জমির আধাপাঁকা ধান

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১০:৩৩ পিএম, শুক্রবার, ২২ অক্টোবর ২০২১ | ৪৯৯

মোংলায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনায় স্কেভেটর চালিয়ে ১২ একর জমির ধান নষ্ট করে দিলো অসহায় কৃষকের। ধান চাষের মালিকদের কিছু না জানিয়ে নিজের ইচ্ছা মাফিক জোর পুর্বক স্কেভেটর (মাটি কাটা মেশিন) চালিয়ে রোপা আধাপাঁকা আমন ধান মেশিনে পিষে দিয়ে নষ্ট করে দেয়। এতে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন স্থানীয় হতদরিদ্র কৃষকরা। বাঁধার মুখে শেষ পর্যন্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্কেভেটর সরিয়ে নিলেও কস্টে বোনা ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শংকা বিরাজ করছে কৃষক পরিবারে।


কৃষকরা জানায়, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পতিত জমি ইজারা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ধান সহ মৌসুমী নানা ফসলের আবাদ করে আসছেন স্থানীয় হতদরিদ্র অনেক কৃষক। প্রতিবছরের মতো এবারও আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ইজারা নিয়ে মৌসুমের শুরুতে রোপা আমনের চাষাবাদ করেছিলেন তারা। বাতাসে ধানের দোলন আর বাম্পার ফলনে কস্টের গ্লানি যেন ভুলে গিয়ে ছিলেন এখানকার কৃষক পরিবার গুলো। এরই মধ্যে হঠাৎ শুক্রবার সকালে কৃষকের আধাপাকা ধানের ফসলে নেমে পড়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীন ড্রেজিং প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ঘাতক স্কেভেটর। কৃষকরা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বালু ডাম্পিংয়ের ডাইক (ভেড়ী) তৈরির কাজ শুরু হয়। আর এ স্কেভেটর দিয়ে মাটিতে মিলিয়ে দেয়া হয় বিপুল অংশের আধাপাঁকা রোপো আমনের ফসল।

কৃষক আয়ুব আলী, বিল্লাল সরদার, ইদ্রিস আলী, ফারুক শেখ, মান্না শেখ ও মর্জিনা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, ধার, দেনাসহ সমিতির লোন নিয়ে এ বছর আবাদ করেছেন তারা। আর আমন ধান উঠলে শোধ করবেন পাওনাদারের দেনা। সংগ্রহ করবেন পরিবারের এক বছরের ধান-চাল। রয়েছে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের সদস্যদের ভরনপোষন। এখন আমন ফসল ঘরে ওঠা তো দূরের কথা দূশ্চিন্তার অন্ত নেই কৃষক পরিবারে। আবার কখন ফসলের মাঠে নেমে পড়ে ঠিকাদারের ঘাতক স্কেভেটর।

স্থানীয় কৃষক সমিতির সভাপতি মোঃ শামিম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষের শত শত একর পতিত জমি বাৎসরিক চুক্তিতে বরাদ্ধ নিয়ে ধানের আবাদ সহ কৃষি চাষাবাদ করছেন শতাধিক কৃষক। ধান উঠলেই শুরু হবে মৌসুমী সবজি চাষ। লবনাক্ত অঞ্চল হওয়ায় এখানকার কৃষকরা মৌসুমী রোপা আমন ফসলের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ড্রেজিং প্রকল্পের ঠিকাদারের হঠাৎ আগ্রাসনে কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। ইতোমধ্যে ১২ একর জমির রোপা আমনের আধা পাঁকা জমিতে ভেড়ী তৈরির নামে শুরু হয়েছে তান্ডব।


আর এতে হাতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন স্থানীয় অনেক দরিদ্র কৃষক পরিবার। তাদের দাবি-ইজারা নিয়ে রোপা আমনের আবাদ করেছিলেন তারা। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের নোটিশ ছাড়াই ঠিাকাদারের খামখেয়ালীপনা আচরন-আক্রোশে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা। ঠিকাদারের এমন আচরন বন্ধে কর্তৃপক্ষের পরিচালক প্রশাসনের দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা।

এ বিষয় ঠিকাদার নিয়োগকারী মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাইড্রেগ্রাফি বিভাগের কর্মকতা কামরুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও ধান পাঁকা পর্যন্ত সময় দেয়া হবে কিনা তা সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ধান পাঁকা পর্যন্ত কৃষকদের সময় দেয়ার বিষয়টি ভাবছেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত