চিতলমারীতে ‘স্ট্রোকে’ মারা যাচ্ছে ফলন্ত টমেটো গাছ, দিশেহারা চাষি

এস. এস.সাগর

আপডেট : ০৮:৩৭ পিএম, শুক্রবার, ৮ অক্টোবর ২০২১ | ৫৬৭

চিতলমারী উপজেলায় জমির ফলন্ত টমেটো গাছ ‘স্ট্রোক’ করে মারা যাচ্ছে। কোন বালাইনাশকেই এ মৃত্যু রোধ হচ্ছে না। ফলে চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। কৃষিবিদরা জানিয়েছেন এটি মাটি বাহিত ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত রোগ। এ রোগে গাছের শেকড় একেবারে নষ্ট করে ফেলে। টমেটোর চারা লাগানোর আগে চাষিরা ভালো করে মাটি পরিশোধন না করায় ক্ষেতে মহামারি আকারে স্ট্রোক রোগ ছড়িয়ে পড়ে।


চিতলমারী উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ একর জমিতে চক্র, পানপাতা, মিন্টু সুপার, লাভলী, হাইটম ও বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত এ এলাকায় শীতকালীন টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। তাই আগাম চাষে ঝুঁকির সম্ভাবনা থেকেই যায়।


উপজেলার খড়মখালী গ্রামের টমেটো চাষি হাফিজুল করিম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, টাকা ধার নিয়ে জমিতে সাড়ে ৪ হাজার টমেটো গাছ লাগিয়েছিলাম। কঠোর পরিশ্রম ও পরিচর্যায় গাছগুলোতে প্রচুর টমেটোও ধরেছিল। আশা ছিল এ বছর টমেটো বিক্রি করে সব ধার-দেনা পরিশোধ করবো। হঠাৎ ফলবান টমেটো গাছ স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। এখন ঋণের টাকা তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচাটা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অনুরূপ জানালেন ওই গ্রামের সবজি চাষি নিতিষ হালদার নিতু। তিনি চিংড়ি ঘেরের পাড়ে ৩ হাজার টমেটো গাছ লাগিয়েছেন। তাঁর ভাই উত্তম হালদার লাগিয়েছেন আড়াই হাজার গাছ। তাঁদের দুই ভাইয়েরই স্ট্রোক রোগে গাছ মারা যাওয়া শুরু হয়েছে। এ রোগ এমন, একবার ক্ষেতে লাগলে সব গাছ মারা যায়।


খড়মখালী গ্রামের কৃষক লিপন হালদার, অশোক সিংহ, আশিষ হালদার ও বেল্লাল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, আমরা একেক জনে আলাদা ভাবে ৩ থেকে ৪ হাজার করে টমেটো গাছের চাষ করেছি। আমাদের ফলন্ত গাছ গুলো স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। কোন বালাইনাশকে তা রোধ করতে পারছি না। এই স্ট্রোক রোগ আমাদের এলাকায় মহামারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।


উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (খড়মখালী-ডাকাতিয়া ব্লকের দায়িত্ব প্রাপ্ত) অলোক কুমার মন্ডল বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, যে সব ক্ষেতে স্ট্রোকে গাছ মারা যাচ্ছে সে ক্ষেত গুলোতে আমরা কাজ করছি।

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫ টায় চিতলমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতা অসীম কুমার দাস মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, গত বছরও এখানে স্ট্রোক রোগ দেখা দিয়েছিল। তখন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কৃষিবিদরা এ উপজেলার টমেটো গাছ নিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়েছেন। পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে তাঁরা জানিয়েছেন এই স্ট্রোক একটি মাটি বাহিত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোগ। এ রোগ গাছের শেকড় একেবারে নষ্ট করে ফেলে। টমেটোর চারা লাগানোর আগে চাষিরা ভালো করে মাটি পরিশোধন না করার কারণেই জমিতে মহামারি আকারে স্ট্রোক রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত এই জমিতে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে টমেটো জাতীয় গাছ লাগানো যাবে না। কিন্তু চাষিরা আমাদের পরামর্শ মানছেন না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত