রায়েন্দা-মাছুয়া খেয়াঘাট

ইজারাদারের জুলুম থেকে যাত্রীদের মুক্ত করলেন বিভাগীয় কমিশনার

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা 

আপডেট : ১২:২৪ পিএম, সোমবার, ৩০ আগস্ট ২০২১ | ৭৬৬

যাত্রীদের কাছ থেকে ঘাটের টোল এবং খেয়া ভাড়ায় জুলুমতো আছেই। তার ওপর কারো সঙ্গে হাঁস-মুরগি থাকলে তারও দিতে হতো টোল এবং খেয়া ভাড়া। মাত্র আড়াই কিলোমিটার নদী পার হতে একজন যাত্রীর কাছ থেকে নিয়মিত আদায় করা হতো ১৫০টাকা থেকে তিন শ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০০টাকাও। তার ওপর পান থেকে চুন খসলেই কোনো যাত্রী মানসম্মান নিয়ে ফিরতে পারতো না ঘাট থেকে। অসহায় যাত্রীরা এমন জুলুম-নির্যাতন আর হয়রানি নিরবে সহ্য করে আসছে যুগ যুগ ধরে।

অবশেষে বাগেরহাটের শরণখোলার রায়েন্দা ও মঠবাড়িয়ার মাছুয়ার মধ্যবর্তী বলেশ্বর নদ পারাপারের খেয়া ঘাটের সেই চিরচেনা চিত্র পাল্টে দিয়েছেন খুলনার বিভাগী কমিশনার (এনডিসি) মো. ইসমাইল হোসেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেয়ে শনিবার (২৮আগস্ট) সন্ধ্যায় ঘাট পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যাত্রীপ্রতি ৫০টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেন। এর পরও যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ওঠে, তাহলে ইজারা বাতিল করা হবে বলেও হুশিয়ার করেন তিনি।\


বিভাগীয় কমিশনারের এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন যাত্রীরা। রবিবার (২৯আগস্ট) দুপুরে রায়েন্দা খেয়া ঘাটের নিয়মিত কয়েকজন যাত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এর আগে যারা ঘাটের ইজারাদার ছিলেন তাদের হাতে আমরা বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাছাড়া, গত কয়েক বছর ধরে এই ঘাটে ভাড়া আদায়ে চরম অনিয়ম চলছে। ৫০টাকা ভাড়া নির্ধারণ করায় আমরা জুলুমমুক্ত হলাম।


ঘাট পরিদর্শকালে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শাহিনুজ্জামান, শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রায়হান উদ্দিন শান্ত, উপজেলা নির্কাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাতসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


জানা গেছে, রায়েন্দা-মাছুয়া খেয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত মানুষ ও মালামাল পারাপার হয়। শরণখোলা ও মঠবাড়িয়া এই দুই উপজেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য কাছাকাছি বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই ঘাটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘাটটি এবছর শরণখোলার আব্দুস ছালাম হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ৫৫লাখ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নেন।


পরে বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন উপজেলা প্রশাসন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইউএনও’র কার্যালয়ে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি সরকারের উন্নয়নকে আরো গতিশীল করতে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ সমাজের দায়িত্বশীল সবাইকে সম্মিলিত সহযোগিতার আহবান জানান।

সভায় অংশগ্রহনকারীরা শরণখোলায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যাটন কেন্দ্র গড়ে তোলা, বৃষ্টিতে জলাবব্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকটের স্থায়ী সমাধান, সড়ক ও ব্রীজ নির্মাণ, চিকিৎসক ও সরকারি দপ্তরের শূন্যপদ পুরনসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরলে অচিরেই তা সমাধানের আশ্বাস দেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত