দোভাষী মিরাজকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ, প্রতিবাদের ঝড়

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ১২:১৯ এএম, রোববার, ৮ আগস্ট ২০২১ | ৪৬৪

শরণখোলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম মিরাজের (৩০) বিরুদ্ধে ইয়াবার মামলা ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে তার পরিবার। এমনকি মামলার স্বাক্ষীরাও বলছেন মিরাজের কাছে তারা ইয়াবা দেখতে পাননি। এঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।


সবাই বলছে, স্থানীয় রাজনৈতির প্রতিহিংসার শিকার মিরাজ ও তার পরিবার। যাকে কেউ কখনো সিগারেট পর্যন্ত খেতে দেখেননি, সেই ছেলে হঠাৎ করে ইয়াবার মামলায় ফেঁসে যাবে এটা কল্পনার অতীত। তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।


জানা গেছে, গত ১ আগস্ট রাত ১০টার দিকে তাফালবাড়ী বাজারসংলগ্ন এলাকা থেকে মিরাজকে আটক করে পুলিশ। পরে তার কাছ থেকে তিন পিচ ইয়াবা উদ্ধার দেখানো হয়। ওই রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খাতুনে জান্নাত তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তিন মাসের কারাদ- প্রদান করেন।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ী বাজারের আব্দুল আজিজ হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকারী চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন।


সাউথখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মিরাজের বড় ভাই ইমরান হোসেন রাজিব বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, আমার ভাই ছোটবেলা থেকেই একটু সহজসরল প্রকৃতির। ওইদিন রাতে জরুরী কাজে সে তাফালবাড়ী বাজারের কাছে আমার ফুফাতো বোনের বাসায় যায়। সেখান থেকে তার কিছু পরিচিত লোক কথা আছে বলে পাশের বাবুল খানের ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। এর কয়েক মিনিটের মাথায় ওই বাসায় পার্শ্ববর্তী তাফালবাড়ী ফাঁড়ির পুলিশ চলে আসে। এসময় ডেকে নেওয়া লোকজন পালিয়ে গেলেও মিরাজ সেখানে বসে ছিল। পরে তিন পিচ ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে তাকে আটক করে পুলিশ।


ইমরান হোসেন রাজিব বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, আমার ভাইকে পূর্ব পরিকল্পিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। একই দলের একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমাদের পরিবারের মানসম্মান নষ্ট করতে এই নোংরা খেলায় নেমেছে। আমি এই ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি তীব্র ঘৃনা প্রকাশ করছি।


মামলার দুই স্বাক্ষী সালমা বেগম ও আফান ফরাজী বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মিরাজের কাছ থেকে আমরা কোনো ইয়াবা উদ্ধার করতে দেখিনি। পুলিশ আমাদের স্বাক্ষী হিসেবে রেখেছে। মিরাজ একটা ভালো ছেলে। তাকে যারা ডেকে এনেছে তারাই ফাঁসিয়েছে।

তাফালবাড়ী বাজার কমিটির সভাপতি শামসুল আলম রিপন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মিরাজ আমাদের চোখের সামনেই বড় হয়েছে। আমরা কখনো খারাপ কিছু দেখিনি। এটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মিরাজকে ইয়াবা তো দূরের কথা, তাকে কোনোদিন বিড়ি-সিগারেটও খেতে দেখিনি। ও নিঃসন্দেহে একটা ভালো ছেলে।


সাউথখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম লিটন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মিরাজ নেশাখোর হলে তার চলাফেরা, আচরণে ধরা পড়তো। আগে পাছে দু-একবার অভিযোগ উঠতো। কিন্তু এই ছেলের বিরুদ্ধে আমরা তেমন কিছু এখন পর্যন্ত পাইনি।


সাউথখালী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু রাজ্জাক আকন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মিরাজের পরিবার আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তারপরও বলবো সে একজন ভালো ছেলে। তার বিরুদ্ধে নেশার অভিযোগ এটা বিশ্বাসযোগ্য না। এমন ঘটনার নিন্দা জানাই।


শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মিরাজকে আটকের পর তার কাছ থেকে তিন পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত