বাঘের চামড়া, মাথা, হাড়গোড় উদ্ধারই কাল হল বনরক্ষী মোস্তফার

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৩:৫৬ পিএম, বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ | ৮৬১

২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। শরণখোলা উপজেলার পশ্চিম খাদা গ্রামের খয়ের মিয়া বয়াতীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের (বাঘ) তিনটি চামড়া, চারটি মাথা ও ৩১ কেজি হাড়গোড় উদ্ধার করে বনরক্ষীরা। তখন দেশব্যাপী আলোচিত ওই অভিযানে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বনরক্ষী মো. মোস্তফা হাওলাদার। এ সংক্রান্তে দায়ের হওয়া মামলার সাক্ষীও তিনি (বনরক্ষী)। তার সাক্ষীতে সাজা হয় পাচার চক্রের মূল হোতা খয়ের মিয়া বয়াতীর। এই বনরক্ষী আর পাচারকারি একে অপরের প্রতিবেশীও।

বাঘের চামড়া, মাথা, হাড়গোড় ধরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তাদের মধ্যে শত্রুতা। এরপর থেকে সাজাপ্রাপ্ত খয়ের মিয়া বয়াতি, ছেলে বাচ্ছু বয়াতি এবং ভাই জালাল বয়াতি রোষানলে পড়ে বনরক্ষী মোস্তফা হাওলাদার (বিএম-২৭)। পাচারকারি চক্রটি বনরক্ষী মোস্তফাকে নানাভাবে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় সেই থেকেই। একবার মারধরও করেছে তারা এই বনরক্ষীকে। মিথ্যা অভিযোগ তুলে চাকরি থেকেও সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রের হোতা খয়ের মিয়া বয়াতীর ভাই জালাল বয়াতী সম্প্রতি বন বিভাগের উর্ধ্বতন মহলে বনরক্ষী মোস্তফার বিরুদ্ধে হরিণ শিকারিদের সহযোগিতার কাল্পনিক অভিযোগ করেছেন। মিথ্যা ওই অভিযোগের খবরে চরম হতাশায় পড়েছেন বনরক্ষী মোস্তফা ও তার পরিবার।

উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের পশ্চিম খাদা গ্রামের মৃত আদেল উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে বনরক্ষী মোস্তফা হাওলাদার বর্তমানে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রে কর্মরত আছেন। বনরক্ষীর স্ত্রী বিউটি বেগম পাচার চক্রের মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানির হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে বুধবার (৩০জুন) সকালে শরণখোলা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন।


বনরক্ষীর স্ত্রী বিউটি বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, আমার স্বামী গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরে ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিবেশী মেছের বয়াতীর ছেলে মো. খয়ের মিয়া বয়াতীর বাড়ি থেকে বাঘের তিনটি চামড়া, চারটি মাথা ও ৩১ কেজি হাড় উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে ওই মামলায় (মামলা নং-সি আর (বন) ০৪/১১) আমার স্বামী আদালতে স্বাক্ষী দিলে ২০১৭ সালে খয়ের মিয়া বয়াতীর দুই বছরের সাজা হয়। এরপর থেকে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

বিউটি বেগম আরো বলেন, ২০১৯ সালে ছুটিতে বাড়িতে আসলে পাচারকারিরা আমার স্বামীকে (মোস্তফা হাওলাদারকে) মারধর করে। তারা আমাদের বাড়িতে এসে হুমকিধামকি ও অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে এবং চাকুরিচ্যুত করতে বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেছে।

বনরক্ষী মোস্তফা হাওলাদার মুঠোফোনে জানান, তিনি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিবেশী বণ্যপ্রাণি পাচার চক্রের কবল থেকে বাঘের চামড়া, মাথা ও হাড়গোড় উদ্ধার করার পর থেকে তারা একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করছে। তিনি তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচার আশা করেন।

রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বনরক্ষী মোস্তফা হাওলাদার একজন নিরিহ ও সৎ মানুষ। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয়।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বনরক্ষী মোস্তফার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়টি শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে, তার গ্রামের পাচারকারি একটি চক্র তাকে নানা রকম হয়রানি করছে বলে বনরক্ষী মোস্তফা আমাকে আগে থেকেই জানিয়ে ছিল।

এব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগকারী মো. জালাল বয়াতী বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বাঘের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় খয়ের মিয়া বয়াতীর নামে মামলা হয়েছে। এটা মোস্তফা আর খয়ের মিয়ার বিষয়। কিন্তু মোস্তফা যে হরিণ শিকারে সহযোগিতা করে জানতে পেরে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে অভিযোগ করেছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত