থানায় নিয়ে মামলা করানো প্রধান স্বাক্ষী এখন আসামীদের পক্ষে

ধর্ষন মামলা করে বিপাকে মোংলায় একটি পরিবার

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৬:১৫ পিএম, সোমবার, ১৫ মার্চ ২০২১ | ৮৩৭

ফাইল ফটো

মোংলায় বিয়ের মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষন করে আসছিল প্রতিবেশী এক যুবক সুবির বৈরাগী। সর্বশেষ বিয়ে করবে বলে বাসায় ডেকে জোর পুর্বক ধর্ষন শেষে মারধর করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয় ওই কিশোরীকে। পরবর্তীতে ইউপি সদস্যসহ স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মোংলা থানায় ধর্ষন মামলাও করে। ধর্ষক সুবিরকে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে যাওয়ায় মামলার প্রধান স্বাক্ষীসহ এলাকার কয়েক সন্ত্রাসী এখন আসামীদের পক্ষ নিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদিনীকে বেদরক মারধর ও প্রান নাশের হুমকি দিচ্ছে বলে নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ।

আর নির্যাতনের শিকার কিশোরী মামলা করে সন্ত্রাসীদের শারীরিক ও মানুষিক অত্যাচারের কবলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অসহায় পরিবারটি। হামলা-মামলাসহ তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক নানা চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে ধর্ষক পরিবারের লোকসহ প্রতিপক্ষ গ্রুপ।


উপজেলার চিলা ইনিয়নের উত্তর হলদিবুনিয়া গ্রামে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসায় ডেকে কিশোরীকে জোর পুর্বক ধর্ষন করে প্রতিবেশী যুবক সুবির বৈরাগী। ধর্ষনের ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারন করে এ বিষয় কাউকে বলে দিলে এ দৃশ্য নেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায় ধর্ষক সুবির বলে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকের কাছে এসে অভিযোগ করে ওই কিশোরী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে মামলার প্রধান আসামী ধর্ষক সুবির বৈরাগী আদালতে আত্নসমর্পন করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরন করে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ধর্ষকের পরিবার এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই মামলার প্রথম স্বাক্ষী মিজান মোল্লা ও মাদক সেবী রাজিব বৈরাগীসহ তাদের কিছু সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন ।

মামলার স্বাক্ষী মিজান মোল্লা ও স্থানীয় রাজিব বৈরাগী মিলে ধর্ষন মামলার বাদিনীকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ সৃস্টি করে। এতে বাদী রাজী না হওয়ায় ২৪ ফেব্রুয়ারী তাকে বেধরক মারধর করে এ গ্রুপের লোকজন।

স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের চিকিৎসা দেয়া। এব্যাপারে সোহাগ, ধর্ষক সুবির, স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী সৈয়দ, সনেট, জেম্স, অনুজ, দিলিপ, এলড্রিন ও জেভিয়ার বৈরাগীসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিতা ওই কিশোরী।

আর থানায় ধর্ষন ও মারধরের মামলা করলে সন্ত্রাসীদের চাপের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নির্যাতনের শিকার কিশোরীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। আগামী ১৮ মার্চ বাদী সহ এ মামলার স্বাক্ষীদের তলব করেছে বাগেরহাট আদালত।


ধর্ষন মামলার আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় এবং প্রধান স্বাক্ষী এখন আসামীদের পক্ষ নেয়ায় মামলার সুষ্ঠ বিচার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে নির্যাতিতাসহ তার পরিবারের সদস্যরা।


এলাকার সন্ত্রাসী ওই প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ইতিমধ্যে হামলা-মামলা সহ নানাভাবে অপদস্ত হয়েছে একই এলাকার স্কুল শিক্ষক প্রনতী মন্ডলসহ বেশ কয়েকটি পরিবার বলে বহু অভিযোগ রয়েছে। এমনকি নিরীহ ওই পরিবারগুলোর নারী ও পুরুষ সদস্যরা একাধিক ষড়যন্ত্রমূলক মামলার ঘানি টানছে। শুধু তাই নয়, অকারনে ওই সকল পরিবারের সদস্যদের উপর চলছে নানা চক্রান্ত ও মানুষিক নির্যাতন।

গ্রামের ছোট-খাটো নানা ইস্যূতে ক্ষমতাসীন প্রভাবশালী ওই গ্রুপটি এলাকায় একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরী করে নিরিহ লোকজনকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে ফাঁসানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে মিজান, রাজিবসহ ওই কু-চক্রমহলটি। কয়েক মাস ধরে উদ্ভুদ পরিস্থিতির মধ্যে ধর্ষণের স্বীকার ওই পরিবারটির দিন কাঁটছে।


আদালত থেকে মামলা তুলে না নিলে একের পর এক হুমকি দিচ্ছে প্রাণ নাশসহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর। এ অবস্থায় নিরীহ কিশোরীর পরিবার ও তার স্বজনরা চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। কখন হামলা, আবার কখনো মিথ্যা ষড়যন্ত্রের মামলা হবে তা নিয়ে দূচিন্তার অন্ত নেই নির্যাতনের শিকার পরিবারটির। এ অবস্থায় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই ও ধর্ষন মামলার সুষ্ঠ বিচার পাওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নিরুপায় গরীব পরিবারটি।

মামলা তুলে নেয়ার হুমকীর কথা অস্বীকার করে ধর্ষন মামলার প্রধান স্বাক্ষী মিজান মোল্লা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, আমাকে ওই মামলার স্বাক্ষী দিয়েছে তা আমি জানিনা, তবে দু’পক্ষে কেউ সামাজিকভাবে ভাল না বলে জানায় তিনি।


ধর্ষন মামলা ও মারধরের ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোংলা থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ মুখার্জী এবং আঃ রাজ্জাক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, কিশোরী ধর্ষন মামলার প্রধান আসামী আটক হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। এছাড়া মারধরের একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদশর্নসহ আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত