৬০ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর বন্দরের অপারেশন কাজ শুরু

মোংলায় ট্যুরিস্ট লঞ্চ ডুবি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

মো.মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০৪:৪০ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২১ মে ২০২০ | ৫৮২

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে মোংলার পশুর নদীতে একটি ট্যুরিস্ট লঞ্চ ডুবে গেছে। এছাড়া ছোটখাটো আরো কিছু নৌকা ও ট্রলার ডুবির খবর পাওয়া গেছে। পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাসহ কাঁচা ঘরবাড়ী ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি গ্রাম ও অসংখ্য চিংড়ি ঘের। অনেক জায়গায় ইটের সোলিং রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বন্ধ থাকার পর বন্দরের জাহাজে মালামাল ওঠানামার কাজসহ সকল অপারেশন কাজ বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় চালু হয়েছে। সকালে কানাইনগর প্লাবিত স্থান ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় পরির্শন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। ক্ষতিগ্রস্থ এসকল অসহায় মানুষদের প্রাথমিক পর্যায়ে ত্রান সহায়তা ও সকালে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষদের খাবারও বিতরন করা হয়েছে।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাহাত মান্নান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ঘুর্নিঝড় আম্পানের আঘাতে মোংলায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার বিকাল থেকে যখন ঘুর্নিঝড় আঘাতহানে তখন উপজেলার ইউনিয়ন গুলোতে মানুষের কাঁচা ঘরবাড়ী ও রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। উপড়ে পড়েছে অনেক মুল্যবান গাছপালা। ঝড়ের সময় সাইকোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়া লোকজনের মাঝে বৃহস্পতিবার সকালেও খাবার বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসনের সদস্যরা।

বুধবার দিনে এবং রাতে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিয়েছিল বেশ কিছু মানুষ। রাতে ঝড় কিছুটা কমে যাওয়ায় তারা এখন নিজ বাড়ীঘরে চলে গিয়েছেন। তবে ঝড়ে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের তালিকা পাওয়ার পর জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে উপজেলার চাদঁপাই ইউনিয়নের পশুর নদীর তীরবর্তী কানাইনগর, কলাতলা, সুন্দরতলাসহ বিভিন্ন জায়গার দুর্বল ভেঁড়ী বাঁধের কয়েকটি জায়গা ধ্বসে পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে আবহাওয়া অফিসের দেয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসের কথা বলা হলেও মোংলা সমুদ্র বন্দরের পশুর চ্যানেলসহ সুন্দরবনের নদ-নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া পানিতে অসংখ্য পুকুর ও চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাবার খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ জেড এম তৌহিদুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চিংড়ি অধ্যুষিত মোংলা এলাকায় পুকুর ও চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে। ঝড়ের তান্ডবে বুধবার রাত ১টার দিকে কানাইনগর এলাকায় পশুর নদীর ভেড়ীবাধ ভেঙ্গে কয়েকটি বাড়ী তলিয়ে যায়। সকালে সে সকল ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান, নৌবাহিনীর কন্টিজেন্ট ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তবে ভেড়ীবাধ ভাঙ্গা ও বাঁধ সংলগ্ন লোকজনকে দুপুরে প্রাথমিক পর্যায়ে ত্রান সহায়তা দেয়া হয়েছে এবং দ্রুত এ বাঁধ সংস্কার করারও আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।

অপরদিকে মোংলা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া বন্দরের বানিজ্যিক জাহাজের পন্য খালাস-বোঝাই এবং অপারেশন কাজ ৬০ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়েছে। বন্দর জেটি ও চ্যানেলে অবস্থানরত ১০াট বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে যথারীতি পণ্য ওঠানামার কাজ চালু করা হয়েছে। তবে ঘুর্নিঝড় আম্পানের তান্ডবে তেমন কোন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়নি বন্দরকে।

এদিকে আম্পানের তান্ডবে সুন্দরবনের ঢাংমারী ষ্টেশন, লাউডোব, দুবলা ও মরাপশুর ক্যাম্পের জেটি, ঘরবাড়ীসহ অন্যান্য স্থাপনা এবং বনের গাছপালার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে মিষ্টি পানির পুকুর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বনপ্রহরীদের জব্দকৃত কাঠ জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে বলে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ বেলায়েত হোসেন। তবে এতে কোন জেলের নৌকা ডুবি, জেলে নিঁখোজ কিংবা বন্যপ্রানীর হতাহতের খবর এখন পর্যন্ত নেই বলেও জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত