ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ

ছাত্রদল নেতাই কি হবেন চিতলমারী যুবলীগের সভাপতি !

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১২:০২ পিএম, শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল ২০১৮ | ৫৩৮৪

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দল গুলো ঘর গোছাতে ব্যস্ত। সাংগঠনিক কর্মকান্ডে গতি আর শক্তি সঞ্চারে সরব দেশের প্রতিটি উপজেলার নেতাকর্মিরা। নির্বাচনী আমেজ ও আলোচনায় মুখর গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন হাট-বাজার। এ নির্বাচনকে ঘিরেই সারাদেশে আওয়ামী লীগের চলছে অনুপ্রবেশকারী হঠানোর শুদ্ধি অভিযান। আর এ শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেও চরম আতংকিত চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতাকর্মিরা। একটা প্রশ্নই সব সময় তাদের তাড়া করছে, শেষ পর্যন্ত সাবেক ছাত্রদল নেতা নজরুলই কি হবেন চিতলমারী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। আর এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগের নেতাকর্মিদের অন্তরে জ্বলছে তুষের আগুন। শুক্রবার সকালে সবুজ সংঘ চত্বরে বসে চরম আক্ষেপ ও দুঃখভরা কণ্ঠে এমনটাই জানালেন দলের দুর্দিনের জেলখাটা কয়েকজন নেতাকর্মি।


তারা আরও জানান, চিতলমারী-মোল্লাহাট ও ফকিরহাট নিয়ে বাগেরহাট-১ আসন গঠিত। এরমধ্যে চিতলমারী উপজেলায় হিন্দু ভোটার বেশী থাকায় এটাকে আওয়ামী লীগের শক্তঘাঁটি হিসেবে ধরা হয়। এ আসন থেকে বরবারই নির্বাচন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর উপ-নির্বাচনে তার আপন চাচাত ভাই শেখ হেলাল উদ্দীন নির্বাচন করেন। তিনি এক নাগাড়ে ১৮ বছর ধরে এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন ও ভালবাসা দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করে গণমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা’র নামের পরেই থাকছে শেখ হেলাল উদ্দীনের নাম।
এ নির্বাচনকে সফল করতে স্থানীয় আওয়ামী যুবলীগ কঠোর দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু গত ৩ অক্টোবর ২০১৭ সালে চিতলমারী উপজেলা যুবলীগের কমিটি সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়। আর এরপর থেকেই শুরু হয় চিতলমারী উপজেলা যুবলীগের লবিং-গ্রুপিং। কে হবেন আগামী দিনের যুবলীগের কর্ণধার। আলাপ আলোচনায় সামনে চলে আসে সাবেক ছাত্রদল নেতা মোঃ নজরুল ইসলামের নাম। আর তাকে ঘিরেই আওয়ামীলীগের মূলধারার নেতাকর্মীদের ভিতরে জ্বলছে তুষের আগুন।


বাগেরহাট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক উপগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক দেবাশিষ বিশ্বাস, চিতলমারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বিকাশ বালা, শেরে বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মিহির মন্ডল ও সাবেক যুবলীগ নেতা গোবিন্দ দাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ১৯৯৫ সালের পহেলা মে ছাত্রদল নেতা নজরুল ইসলাম ছাত্রলীগ করার অপরাধে দলবল নিয়ে তাদের উপর চরম নির্যাতন চালায়। সেই সাথে সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আওয়ামী সংগঠনের ১৩ জন নেতাকর্মিকে ৯ মাস করে জেল খাটায়। এখানেই শেষ নয় নজরুলের আপন ছোট ভাই তৎকালিন ছাত্র শিবির নেতা মোঃ কামরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর ১৭ মার্চের পোষ্টারের উপর পোষ্টার লাগায়। এ নিয়েও নজরুল ছাত্রলীগের নেতাকর্মিদের বিভিন্ন সময় নিপীড়র করে। আর আজ যদি সেই নজরুল যুবলীগের সভাপতি বা সম্পাদক হয় তা হলে বলার কিছু থাকে না।

চিতলমারী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, শুধু কামরুলই নয় নজরুলের আপন চাচাত ভাই এশারত শেখ কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন সভায় বোমা হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের সহযোগি হিসেবে আসামী ছিল।


ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম লিটন ও সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল রানা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, দলের দুর্দিনের প্রকৃত নেতাকর্মিরা যদি নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে দুঃখের সীমা থাকে না। সংগঠনের সকলেই চায় মূলধারার থেকেই যুবলীগের নেতা নির্বাচিত হোক।


ছাত্রলীগের আরও এক সাবেক সভাপতি শেখ শামিম আনোয়ার বাবু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বর্তমানে চিতলমারী উপজেলা যুবলীগের কর্মকান্ড হাওয়ার উপর ভাসছে। যুবলীগে নেতৃত্ব দেওয়ার মত মূলধারার ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মির অভাব নেই। নজরুলের ভাই শিবির নেতা কামরুল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পোষ্টারের উপরে জামায়াতের পোষ্টার লাগালে প্রতিবাদ করতে গেলে ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ হয়। তাই বিতর্কিত কোন ব্যক্তিকে দলের নেতৃত্ব দিলে সেটা হবে দলের জন্য আত্মঘাতী।


এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ পুকুল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, শেখ হেলাল উদ্দীন এক নাগাড়ে ১৮ বছর ধরে এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন ও ভালবাসা দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করে গণমানুষের নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাই চিতলমারী উপজেলা যুবলীগের কমিটির ব্যাপারে তিনি সুন্দর একটা সমাধান দিবেন এ আশায় চেয়ে আছে নেতাকর্মিরা।


তবে মোঃ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, তিনি কোন দিনই ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। কোথাও তার নামের তালিকা নেই। ১৯৯৫ সাথে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে তার ছাত্রদলের এক বন্ধু আহত হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা হলে তার স্বাক্ষীতেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মিরা আদালত থেকে বেকসুর খালাস পান।

নজরুল ইসলাম আরও জানান, তার ভাই কামরুল ইসলাম ৭ম শ্রেনী পর্যন্ত খুলনা আলীয়া মাদ্রসায় পড়েছে। সে বা তার পরিবারের কেউ জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। এছাড়া তার চাচাত ভাই এশারত শেখকে কোটালিপাড়ায় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার জন সভায় বোমা হামলা মামলায় মুফতি হান্নানের সহযোগি হিসেবে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এশারত ওই সময় ব্র্যাকের একটি মামলায় হাজতে ছিল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত