মোংলার চিলা বাজারে দুই গ্রুপের জোর পুর্বক খাজনা আদায়

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০১:১৯ এএম, শুক্রবার, ৪ আগস্ট ২০২৩ | ৩৫৭

মোংলার পশুর নদীর তীরে ঐতিহ্যবাহী চিলা হাট-বাজারে ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে দুই গ্রুপের জোর পুর্বক খাজনা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক গ্রুপ আদায় করছে জমির মালিক দাবী করে, আর অন্য জন আদায় করছে সরকারী ইজারাদার হিসেবে।এসকল অবৈধ আদায়কারীদের চাপের মুখে ক্রেতা-বিক্রেতারা দুই গ্রুপকে অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুর-দুরন্ত থেকে আসা ব্যাবসায়ীরা, আর ভোক্তাপর্যায়ে বেশী দামে ক্রয় করছে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এর প্রতিকার চেয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বলছে, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে নেয়া হবে কঠোর ব্যাবস্থা।



চিলা বাজারে সরে খোজ নিয়ে জানা যায়, মোংলা উপজেলা ও এর পার্শবর্তী থানাগুলোর এক মাত্র হাট-বাজার পশুর নদী মোহনায় শত বছরের পুরানো চিলা বাজার। এখানে প্রায় ১০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা বাজারটি প্রতি সপ্তাহের রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা। চালনা, বাজুয়া, দাকোপ, রামপাল, মোড়েলগঞ্জ ও সাতক্ষীরা সহ এর আশপাশ এলাকা থেকে সমবেত হয় প্রায় ৩০/৪০ হাজার ক্রেতা-বিক্রেতা।



ব্যাবসায়ীদের সুবিধার জন্য বাজারের পরিধি বৃদ্ধি করতে ২০০৬ সালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু তালেব তৎকালীন ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলীর কাছ থেকে আরো একর জমি ক্রয় করে নেয়া হয়। সেখানে সরকারী ভাবে তৈরী করা হয় নদীর ঘাট, টোলঘর ও দোকানপাট সহ ব্যাবসায়ীদের জন্য বিভিন্ন স্থাপানা। প্রতি বছরের ন্যায় সরকারের রাজস্বের জন্য দেয়া হয় বাৎসরিক ইজারা, যা ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য স্থানীয় আঃ হালিম হাওলাদারের কাছে সরকারীভাবে ইজারা দেয়া হয়েছে, যা চলমান রয়েছে।



কিন্ত জমি বিক্রেতা ইয়াকুব আলীর মৃত্যুর পর ২০১১ সাল থেকেই তার ওয়ারেশ রফিক শেখ, নজরুল শেখ, মনি শেখ ও ভবোতোষ রায় সহ ৮১০ জনের একটি গ্রুপ ওই বাজারের জমির মালিক দাবী করে ব্যাবসাীদের কাছ থেকে জোর পুবর্ক খাজনার নামে হাজার হাজার টাকা আদায় করছে। এরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে হেয়নেস্ত হতে হয় ব্যাবসায়ীদের বলে অভিযোগ অনেকেরই। কোন কোন ব্যাবসায়ীরা টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে বসতে দেয়া হয়না বাজারে। এমনকি বাজার থেকে বের করেও দেয়া হয় বলে অভিযোগ দুর-দুরন্ত থেকে আসা ব্যাবসাীয়দের।


এদিকে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নেয়া ইজারাদার তাদের নিয়ামানুযায়ী খাজনা আদায় করতে গেলে পরতে হচ্ছে বিরম্বনায়। চিলা বাজারের দুর-দুরন্ত থেকে আসা ক্ষদ্র ব্যাবসায়ীরা পন্য নিয়ে বসার জন্য এক স্থানে দুই গ্রুপকে দিতে হচ্ছে হাজার হাজার টাক। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যাবসায়ীরা, অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা বেশী দামে কিনতে হচ্ছে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য। এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে নেয়া ইজারাদার আঃ হালিম হাওলাদার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছে।



তিনি বলেন, সরকারের নিয়োমানুযায়ী টাকা দিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা নেয়া হয়েছে কিন্ত ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে বাজারের খাজনা নিতে গেলে তারা বিভিন্ন অভিযোগ করে। ফলে ব্যাবসায়ীরা বাজারে আসতে অনিহা প্রকাশ করছে। যারাওবা আসছে তারা রোকশান দিয়ে খালী হাতে ফিড়ে যাচ্ছে বাড়িতে।


এব্যাপারে জমির মালিক দাবীদার মোঃ রফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, আমরা যে খাজনা আদায় করছি সেটা জমির মুল মালিক হিসেবে নেয়া জচ্ছে। কারণ চিলা বাজারে সরকারী কোন জমি নাই, যতটুকু ছিল তা নদীতে ভেঙ্গে গেছে। সম্পুর্ন বাজার এখন মালিকানা জমিতে বসে তাই যার যার জমিতে বাজার বসে তারা ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করছে। আমরা কোন অন্যায় করছিনা জমির মুল মালিক হিসেবে বৈধভাবেই খাজনা নিচ্ছি।
মোংলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ইজারাকৃত কোন হাট-বাজারের জমি কখনও মালিকানা হতে পারেনা। কেউ যদি বাজারের জমি নিজের মালিকানা দাবী করে তা সম্পুর্ন অন্যায় হবে। আমরা তদন্ত করছি, ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে জোর পুর্বক খাজনা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় এ কর্মকর্তা।



মোংলা উপজেলার প্রায় দুই লক্ষ ৭০ হাজার লোকের এক মাত্র সাপ্তাহিক হাট চিলা বাজার। খাজনা আদায়ের নামে দুই গ্রপের দন্ধের কারণে এখন তা বিলুপ্ত হতে বসেছে এ বাজারটি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত