Logo
table-post
বাগেরহাটে সাবেক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
01/01/1970 12:00:00

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাগেরহাট শহরের বাসাবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক খুরশিদা রহমান জুই ও সাবেক প্রধান শিক্ষক কাজী টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।অভিযুক্ত সাবেক ও বর্তমান প্রধান প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী।


অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, ২০০৩ সালে কাজী টিপু সুলতান এই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকা কালীন অনিয়ম করে ত্রা স্ত্রী খুরশিদা রহমান জুইকে কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করেন।২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষক খুরশিদা রহমান জুই কম্পিউটার প্রশিক্ষনের জন্য বিদ্যালয়ে আসেননি। এই সময়ে অসুস্থতা জনিত ছুটি নিয়ে নিয়মিত বেতন ভাতা গ্রহন করেছেন। ২০০৫ সালের ০১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত খুরশিদা রহমান জুইয়ের স্বামী এই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পরবর্তীতে স্বামীর সহযোগিতায় নিজের অবসরে যাওয়ার এক দিন পরেই ০৭ আগস্ট প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায় খুরশিদা রহমান জুই। এই সময়ে এমন কোন অনিয়ম নেই যা স্বামী-স্ত্রী করে নাই।বর্তমান ও সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বামী স্ত্রী সাবেক সহকারি প্রধান শিক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র পাল, কম্পিউটার শিক্ষক বিপ্লব বৈরাগী, কৃষি শিক্ষক প্রবীর বিশ্বাস, ইংরেজী শিক্ষক নয়ন দাস, গ্রন্থগারিক তাসলিমা খাতুন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী বিপ্রকাশ বৈরাগীকে নিয়োগ প্রদান করে ৩৫ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহন করেছেন। এদের সবার বাড়ি বাগেরহাটের বাইরে। এ থেকেই বোঝা যায় এখানে কত বড় দূর্নীতি হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কোন আয়ব্যয়ের হিসেব কাউকে দেয়নি প্রধান শিক্ষক।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, বাকেরগঞ্জ-সুরীগাতী এলাকার মিঠুন নামের এক ব্যক্তিকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ৪ লক্ষ টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এখনও টাকা ফেরত না দেওয়ায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মিঠুন নামের ওই ব্যক্তি।


বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, সাবেক প্রধান শিক্ষক কাজী টিপু সুলতান পদে থাকা অবস্থায় সকল ক্ষেত্রে দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন। সহকারি প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় দূর্নীতি ও স্বজন প্রীতির মাধ্যমে নিজ স্ত্রীকে কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এর পরে নানা অনিয়ম করে নিজ স্ত্রীকে সহকারি প্রধান শিক্ষক ও পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক পদেত নিয়োগ প্রদান করেন। এখনও কাজী টিপু সুলতান এই বিদ্যালয়ের শিক্ষানুরাগী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে বিদ্যালয়ে দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছেন। 


বাগেরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক খান হাবিবুর রহমানের সাথে কাজী টিপু সুলতানের সু-সম্পর্ক থাকায় এতদিন কেউ কোন কথা বলেনি। এছাড়া শিক্ষক প্রনোদনা হিসেবে পাওয়া ৫ লক্ষ টাকার ১ লক্ষ টাকা শুধু মাত্র শিক্ষকদের দিয়েছে আর কিছু কাজ করেছে। বাকি ৩ লক্ষ টাকা মেরে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। দূর্নীতিবাজ স্বামী-স্ত্রীর শাস্তি দাবি করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।


স্থানীয় মামুন আহমেদ বলেন, কাজী টিপু সুলতান দীর্ঘদিন ধরে পকে কমিটির মাধ্যমে এই বিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন। বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করে স্বামী স্ত্রী বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন কাজী টিপু সুলতান। দূর্নীতি ও অনিয়মের টাকা দিয়ে তিনি বাগেরহাট শহরে কোটি টাকার বাড়ি, ৫০ লক্ষ টাকার জমি ও ঢাকার মোহাম্মাদপুরে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২টি ফ্লাট ক্রয় করেছেন। আমরা এই দূর্নীতিবাজ স্বামী-স্ত্রীর বিচার চাই।


এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক খুরশিদা রহমান জুই বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ নেতারা কমিটির সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিনের ভাই লীগ নেতা নাহিদ সরদার ছিলেন সভাপতি। যার কারণে তারা যা বলতেন আমি তাই করতে বাধ্য হয়েছি। আমি কোন অন্যায় করিনি। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা।


কাজী টিপু সুলতান বলেন, স্থানীয় একটি স্বার্থানেষী মহল আমাদের হেয়-প্রতিপন্য করার জন্য এসব মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমরা কোন অন্যায় করিনি।


এ বিষয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সাদিয়া ইসলাম বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
 

@bagerhat24.com