Logo
table-post
মামলা করেও দখলমুক্ত হয়নি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের ঘের
01/01/1970 12:00:00

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফকিরহাটে মামলা করেও বিএনপি নেতা গাজী গিয়াস উদ্দিনের কাছ থেকে নিজের ঘের দখলমুক্ত করতে পারেননি এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। প্রাণ ভয়ে ঘেরেও যেতে পারছেন না মোঃ রবিউল ইসলাম নবীন নামের ওই শিক্ষক। বারবার থানা পুলিশ ও বিএনপি নেতাদের কাছে ধর্না দিয়েও লাভ হচ্ছে না। গিয়াস উদ্দিন ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে মারধর, সরকারি কর্মকর্তার চেয়ারে বসে কার্যক্রম করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।  

 
ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলাম নবীন ফকিরহাট উপজেলার খাজুরা এলাকার বাসিন্দা। গাজী গিয়াস উদ্দিন একই উপজেলার লখপুর এলাকার বাসিন্দা এবং ফকিরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য।  


মোঃ রবিউল ইসলাম নবীন বলেন, ফকিরহাটের পাশ্ববর্তী রুপসা উপজেলার তিলক মৌজায় নিজ জমিতে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য ঘের করে আসছি। কিন্তু ৩১ আগস্ট হঠাৎ করে ফকিরহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য গাজী গিয়াস উদ্দিন তার লোকজন নিয়ে আমার ঘের দখল করে। তারা ঘের থেকে ১৬-১৭ মন সাদা ও চিংড়ি মাছ লুট করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় উপায়ন্তুর না পেয়ে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল ইসলাম গোরাকে জানাই, তাতেও কোন সমাধান পাইনি। পরে ০৩ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালত রুপসা থানাকে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট দিতে বলেছেন। এখনও আমি ওই ঘেরে যেতে পারি না। ঘেরে গেলে মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে আয়ের উৎস ঘেরটি ফিরে পেতে চাই।


স্থানীয়দের অভিযোগ সরকার পরিবর্তনের পরে গিয়াস উদ্দিন, আলীবুদ্দীন শেখ, শরিফুল ইসলাম, আনারুল ফকির, সাবেক যুবদল নেতা নূর ইসলাম শেখ, হুমায়ূন মোড়ল, শহীদ ফকির, জাহিদ শিকারীসহ কিছু বিএনপি নেতাকর্মী এলাকায় মানুষের বাড়িঘর, দোকান ভাংচুর, কাউন্টার দখলসহ নানা অপরাধ করেছেন। এসবের এখনও কোন বিচার হয়নি। 


নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক লখপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে জোরপূর্বক প্রবেশ করে সরকারি কর্মকর্তার চেয়ারে বসে লোকজন নিয়ে টিসিবির চাল বিতরণ করেছেন বিএনপি নেতা গাজী গিয়াস উদ্দিন। অনেক মেম্বারকেও হুমকি ধামকি দিয়েছে।


লখপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার বলেন, ওইদিন আমি অফিসের কাজে বাইরে ছিলাম। কাজ শেষে অফিসে এসে দেখি একজন আমার চেয়ারে বসে আছেন। সামনে অনেক লোকজন। আমি আসলে তিনি উঠে যান।


নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে কাটাখালী এলাকার দোলা, ফালগুনী, ইমাদসহ কয়েকটি বাস কাউন্টার দখলে নেওয়ার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাউন্টার ব্যবসায়ী আজিজুল শেখকে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্চিতও করেছেন।


আজিজুল শেখের ভাই কাউন্টার ব্যবসায়ী আব্দুর রব বলেন, শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে কাটাখালী এলাকার বেশিরভাগ কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। অনেককে লাঞ্চিত করেছে। পরে আমরা সম্মিলিতভাবে আবার কাউন্টারগুলো চালু করেছি। আমাদের তো বাঁচতে হবে।


শরিফুল ইসলাম বাগেরহাট জেলা আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংঘের সহসভাপতি। তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন স্থানীয় গ্রুপিং এর কারণে প্রতিপক্ষের লোকেরা এসব ছড়াচ্ছে। কোনো ধরনের দখল বা চাঁদাবাজি কেউ দেখাতে পারবে না বলেও জানান তিনি। 


অপরদিকে লখপুরের অভি দাশ, জাড়িয়ার আরিফ শেখ, লফিকুল ইসলামের বাড়ি ভাংচুর ও লুট হয়েছে আনারুল ফকিরের নেতৃত্বে। কয়েকজনকে মারধর করারও অভিযোগ রয়েছে আনারুলের বিরুদ্ধে।
নিজ দলের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে দখল ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র।

আলীবুদ্দীন শেখ ওরফে আলী মেম্বর নামের বিএনপির কর্মী লখপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ আলামিন হোসেন, সদস্য সচিব মোঃ আল মামুনকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ ও বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ ধরণের উত্তেজনা পুরো উপজেলা জুড়ে রয়েছে বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।  
অভিযোগের বিষয়ে গাজী গিয়াস উদ্দিন বলেন, যে জমিটি দখলের ওই অভিযোগ উঠেছে, ওই জমি আমরা ৫৫ বছর ভোগ দখল করেছি।

আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করেছিল। এখন আমরা আমাদের জমি বুঝে নিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার চেয়ারে বসা ঠিক হয়নি। তবে আমি নিজে বসতে চাইনি, ভীড় থাকায় স্থানীয় লোকজনই আমাকে বসতে অনুরোধ করেন। মূলত লখপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতা করার ইচ্ছে রয়েছে, যার কারণে কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।


এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ থাকায় আমরা বিভিন্ন স্থানে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি। কোনো ধরনের অন্যায়কে আমরা সমর্থন বা প্রশ্রয় দেব না। যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকবে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।  

@bagerhat24.com