
বাগেরহাটে সাংবাদিক হায়াত উদ্দিনের দাফন—হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল শহর, আইনের দাবি জোরালো
01/01/1970 12:00:00বাগেরহাটের হাড়িখালি এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে দৈনিক ভোরের চেতনার প্রতিবেদক এবং জেলা বিএনপির সক্রিয় নেতা এস এম হায়াত উদ্দিনের (৪০) দাফন শনিবার (৪ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় নিজ বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সকাল/সন্ধ্যার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় হায়াত উদ্দিনকে হাড়িখালি মোড়ে চায়ের দোকানে বসাকালে কয়েকজন যুবক গ্রুপ করে আক্রমণ করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, দুইটি মোটরসাইকেলে করে এসে চার-পাঁচ জন ধারালো অস্ত্র ও হাতুড়ি দিয়ে হামলা চালায়; পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক morgue-এ মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তার লাশ বাগেরহাটে আনা হয় এবং সন্ধ্যায় দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এ এম আকরাম হোসেন তালিম, বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম, স্থানীয় ও জেলা স্তরের গণমাধ্যমকর্মী তথা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। বক্তারা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দ্রুত বিচারের দাবি তোলেন।
বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম মন্তব্য করেন, হায়াত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নীতি, মাদক ও অনৈতিক তদবির নিয়ে সরব ছিলেন—এ কারণেই তার বিরুদ্ধে আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পাশাপাশি তিনি বলেন, কয়েক মাস আগেই তার ওপর হামলার একটি ঘটনা ঘটেছে।
নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম দাবি করেছেন, ‘‘শুধু সত্য ঘটনাগুলো তুলে ধরায় আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। খুনিদের কঠোর শাস্তি চাই।’’ নিহতের মা হাসিনা বেগম অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে তাকে পিটিয়ে আহত করেছিল; সেই সময় মামলা করলেও পুলিশের উদ্যোগমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ সুপার বাগেরহাট এস.এম. আসাদুজ্জামান জানান, প্রাথমিকভাবে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে; তার নাম প্রকাশ করে বলা হয়েছে—ইসরাইল মোল্লা। তদন্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলে যাচ্ছে, এবং পরিবারের তরফ থেকে এজাহার দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা একইসঙ্গে মানববন্ধন আয়োজন করে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে শতাধিক সাংবাদিক অংশ গ্রহণ করে দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্ত, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। বক্তারা বলেছেন, প্রকাশ্যে যে কোনো সাংবাদিককে লক্ষ্য করে এই ধরনের নৃশংস হামলা বরদাশত করা হবে না; ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফল না আসলে আরও কঠোর কর্মসূচি নেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে, বাগেরহাট জেলা বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতারা সংবাদকর্মীদের পাশে এসে মানববন্ধনে অংশ নেন এবং হত্যাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। সংগঠনের নেতা-মিছিলে নিহত সাংবাদিককে রাজনৈতিক কর্মী ও দেশপ্রেমিক হিসেবে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
সাংবাদিক হায়াত উদ্দিনের আকস্মিক মৃত্যু বাগেরহাটে শোক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়েছে। তদন্তের স্বচ্ছতা, দ্রুততার সঙ্গে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ ও রাজনৈতিক দল কড়া প্রতিক্রিয়ার ঘোষণা দিয়েছে—যা ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা ও সাংবাদিক সুরক্ষার প্রশ্নকে ত্বরান্বিত করবে। সাংবাদিকদের দাবি-নিয়োগ এবং তদন্ত কতটা কার্যকর হবে, তা এখন অপেক্ষার বিষয়।