
দুর্গাপূজার প্রস্তুতিতে জমজমাট ফকিরহাট, দিনরাত প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা
01/01/1970 12:00:00পি. কে. অলোক, ফকিরহাট
শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে বাগেরহাটের ফকিরহাটে বইছে উৎসবের হাওয়া। উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে এখন চলছে প্রতিমা তৈরির চূড়ান্ত ব্যস্ততা। মৃৎশিল্পীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে গড়ে তুলছেন একেকটি শৈল্পিক প্রতিমা। আর মাত্র কয়েকদিন পরই (২৮ সেপ্টেম্বর) মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব – দুর্গাপূজা।
ফকিরহাট উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এবছর উপজেলায় মোট ৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় একটি বেশি। কেন্দ্রীয় মন্দির থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত, সর্বত্রই চলছে প্রতিমা তৈরির ধুম।
মণ্ডপে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিমা শিল্পীরা বাঁশ, খড়, দড়ি ও কাদা মাটির সংমিশ্রণে দক্ষ হাতে গড়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ এবং অসুরের প্রতিমা। কেউ কেউ ইতোমধ্যেই প্রতিমায় রং তুলির কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
ফকিরহাটের পালপাড়ার প্রতিমা শিল্পী অরুণ পাল ও লিটন পাল জানান, বছরের এই সময়টাই তাদের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ত। তবে দুঃখের বিষয়, প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে কিন্তু মজুরি বাড়েনি। অনেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে প্রতিমা তৈরি করলেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না। অতিবৃষ্টির কারণে মাটি শুকাতে দেরি হওয়ায় প্রতিমা তৈরির কাজে সমস্যা হয়েছে বলেও জানান তারা।
প্রতিমার আকার ও মান অনুযায়ী প্রতিটি সেটের জন্য শিল্পীরা পান ১৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিমা সেট তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় ১৮ থেকে ২০ দিন।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মনোতোষ রায় কেষ্ট জানান, “ফকিরহাটে ধর্মীয় সম্প্রীতির এক গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় প্রতিবারের মতো এবারও সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা পালিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন জানান, “সরকারি বরাদ্দ পাওয়া মাত্র আমরা পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সভা করব এবং আইন-শৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে সুন্দর পরিবেশে দুর্গাপূজা আয়োজন নিশ্চিত করব।”
প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করে এখন চলছে সাজসজ্জা ও প্রস্তুতির শেষ অধ্যায়। চারদিকে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে এক আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ, যা প্রমাণ করে—বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি এখনো অটুট।