Logo
table-post
বাগেরহাটে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা, চার আসনের দাবিতে ফের উত্তাল জনপদ
01/01/1970 12:00:00

স্টাফ রিপোর্টার  

বাগেরহাট জেলায় চারটি সংসদীয় আসন পূর্বের মতোই বহাল রাখার দাবিতে ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শেষ হয়েছে ৩৬ ঘণ্টার মাথায়। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির কো-কনভেনর ও বিএনপির সাবেক জেলা সভাপতি এমএ সালাম হরতালের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে নতুন ধারাবাহিক কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়।

ঘোষিত নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—আগামী রোববার জেলা ও উপজেলার সকল সরকারি অফিসে অবস্থান কর্মসূচি এবং সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালন। তবে রাতের বেলায় (সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত) হরতাল শিথিল থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, বিএনপির সদস্যসচিব মোজাফফর রহমান আলম, জামায়াত নেতা শেখ ইউনুস আলী ও শেখ মঞ্জুরুল হক রাহাত প্রমুখ।

তারা অভিযোগ করেন, হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভ, নির্বাচন কমিশন অফিসে তালা দেওয়া, এমনকি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রতীকী প্রতিবাদের পরেও নির্বাচন কমিশন থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতারা।

ভোগান্তি ও জনদুর্ভোগ:
হরতালের কারণে বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে যায় আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ। বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড, দড়াটানা সেতু, কাটাখালি মোড়, নওয়াপাড়া, মোল্লাহাটসহ প্রায় ১৩৪টি স্থানে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে নেতাকর্মীরা। এতে জেলার সাথে বাইরের জেলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

চট্টগ্রাম থেকে আসা যাত্রী তানিয়া ও তার স্বামী এনামুল গাজী জানান, “বাস কাটাখালি নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে দড়াটানা আসতে হয়েছে। পথে ৭০০ টাকার বেশি ভাড়া লেগেছে।”

রাতভর সড়কে আটকে থাকা ট্রাক চালকদের অভিযোগ, বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা আদায় করেছে কিছু ব্যক্তি। দড়াটানা সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকচালক আলাউদ্দিন জানান, “ব্রিজ পার হতে দুই বার ২০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। তারপরও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারিনি।”

তবে সর্বদলীয় কমিটির নেতারা এই চাঁদাবাজির দায় অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে অনৈতিক কাজ করলে তার দায় সংগঠন নেবে না।

সীমানা বিরোধের পেছনের পটভূমি:
গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটে একটি আসন কমানোর প্রস্তাব দেয়। পূর্বের চারটি আসনের মধ্যে একটি বাদ দিয়ে তিনটি রাখা হয়। যদিও বাগেরহাটবাসী গণশুনানিতে অংশ নেন এবং চারটি আসন রাখার দাবি জানান, নির্বাচন কমিশন ৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত গেজেটে তিনটি আসনই বহাল রাখে।

চূড়ান্ত আসন বিন্যাস:

  • বাগেরহাট-১: বাগেরহাট সদর, চিতলমারী, মোল্লাহাট

  • বাগেরহাট-২: ফকিরহাট, রামপাল, মোংলা

  • বাগেরহাট-৩: কচুয়া, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা

এর ফলে পূর্বের বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসন বিলুপ্ত হয়ে যায়। সর্বদলীয় কমিটি এই সিদ্ধান্তকে ‘গণমানুষের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছে এবং আসন পুনর্বহালের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করার ঘোষণাও দিয়েছেন এমএ সালাম।


বাগেরহাটের জনগণ নির্বাচনী সীমানা রদে ক্ষুব্ধ। আন্দোলন এখন আইনি পথে গড়ালেও রাজপথের আন্দোলনও চলবে বলে জানিয়েছে সর্বদলীয় কমিটি।

@bagerhat24.com