Logo
table-post
চাকরি গেলেও হার মানেননি মনিরুজ্জামান, জি-নাইন কলা চাষে বদলে দিলেন জীবনের গল্প
01/01/1970 12:00:00

পি কে অলোক,ফকিরহাট
চাকরি হারিয়ে যখন জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার, তখন আশার আলো দেখিয়েছিল কৃষি। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কৃষক মনিরুজ্জামান আজ শুধু একজন সফল চাষি নন, বরং গ্রামের অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি টিস্যু কালচারে উৎপাদিত জি-নাইন (গ্র্যান্ড নাইন) জাতের কলা চাষ করে বদলে ফেলেছেন নিজের ভাগ্য এবং কৃষিতে খুলে দিয়েছেন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

মনিরুজ্জামান জানান, প্রথমে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫০ শতক জমিতে ৩৭৫টি জি-নাইন কলার চারা রোপণ করেন। শুরুতে খরচ হয় প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তবে প্রথম বছরেই প্রতিটি গাছে ফল আসায় তিন গুণ লাভের আশা করছেন তিনি।

প্রতিটি কাধিতে গড়ে ২২০ থেকে ২৮০টি কলা ধরছে। কলার আকার বড়, খেতেও মিষ্টি—যার ফলে বাগানে পাইকার ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় লেগেই আছে। প্রতিটি কাধি কলা ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণ কলার চেয়ে তিনগুণ লাভজনক।

মনিরুজ্জামান বলেন, “চাকরি চলে যাওয়ার পর জীবনে অনেক হতাশ ছিলাম। কিন্তু কৃষি অফিস আমাকে যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তাতে জীবনের নতুন মানে খুঁজে পেয়েছি। এখন আমি চাই, আরও কৃষক এই পথে আসুক।”

শুধু তিনি নন, তার দেখানো পথে হাঁটছেন আরও অনেকেই। চাষি শহীদুল আব্দুল্লাহ জানান, “আগে আমি বিভিন্ন সবজি চাষ করতাম। এখন জি-নাইন কলার চাহিদা ও লাভ দেখে নিজেও সেই পথে হেঁটেছি। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষ করব।”

স্থানীয় কৃষক শরীফ শেখ বলেন, “এক কাধিতে এত কলা আমি জীবনে দেখিনি। পরের বছর আমার জমিতেও এই জাতের কলা লাগাবো।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন জানান, “জি-নাইন কলার ফলন সাধারণ কলার চেয়ে দ্বিগুণ। সাধারণ কলায় প্রতি কাধিতে ৮০-১৪০টি কলা হয়, যেখানে এই জাতের গাছে ২২০-২৮০টি কলা ধরে। সময় কম লাগে, রোগবালাই কম হয়, ফলে কৃষকের খরচও কম।”

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোতাহার হোসেন জানান, “এই জাতের কলা চাষে শুধু লাভই নয়, বরং এটি দিয়ে অর্গানিক ব্যানানা চিপস তৈরি করা যায়, যা স্বাস্থ্যসম্মত এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। দেশে চিপস আমদানির পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন সম্ভব হলে অর্থনৈতিক লাভ ছাড়াও স্বাস্থ্যগত সুফল আসবে।”

তিনি আরও জানান, ফকিরহাটে বর্তমানে প্রায় ৫০০ শতক জমিতে এই জাতের কলার চাষ হচ্ছে এবং ৫০ জন কৃষক নিয়মিতভাবে এই চাষে অংশ নিচ্ছেন।

জি-নাইন কলা শুধু কৃষকের ভাগ্য বদলাচ্ছে না, বরং বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতেও নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

@bagerhat24.com