Logo
table-post
শরণখোলায় গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুতে তোলপাড়, ধামাচাপার অভিযোগে উত্তাল জনতা
01/01/1970 12:00:00

মেহেদী হাসান, শরণখোলা 
বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও চরম অব্যবস্থাপনার অভিযোগে এক প্রসূতি মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। এতে এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম উত্তেজনা।

ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উপজেলার সদর এলাকায় অবস্থিত ‘শাপলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার’, যার মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল ইসলাম ফকির। নিহত প্রসূতির নাম নিপা আক্তার (২৭), যিনি বড় রাজাপুর (চিনির খালপাড়) গ্রামের আমির হোসেন হাওলাদারের মেয়ে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিপা ২৯ আগস্ট সকালে নিরাপদ ডেলিভারির আশায় শাপলা ক্লিনিকে ভর্তি হন। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে সিজার করার সিদ্ধান্ত জানায় এবং ওই দিন বিকেলেই সিজার পরিচালনা করেন সাবেক আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহম্মেদ। সফলভাবে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেও, অপারেশনের পর থেকেই নিপা মারাত্মক ব্যথায় ভুগতে থাকেন।

নিহতের মা রানী বেগম অভিযোগ করেন, সিজারের পর নিপার পেট ও মেরুদণ্ডে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। এ সময় নার্স ও ক্লিনিকের কর্মচারী লোপা দাস একের পর এক ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করলেও কোনো উন্নতি হয়নি। উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় নেওয়ার কথা বললে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। পরে ৩১ আগস্ট বিকেলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষই রোগীকে খুলনায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে তোলার আগেই নিপার মৃত্যু হয়।

নিপার স্বামী হাদিস শেখ জানান, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে তার স্ত্রীর মৃত্যু হতো না। চিকিৎসায় চরম গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ তার।

সিজার পরিচালনাকারী ডা. ফয়সাল দাবি করেন, অপারেশন সফল ছিল এবং তিনি পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানেন না। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রিয় গোপাল জানান, তিনি এই সিজারে সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং এনেস্থেশিয়াও দেননি। তিনি বলেন, "সিজার পরবর্তী জটিলতা থেকেই হয়তো মৃত্যু হতে পারে।"

এ ঘটনায় ক্লিনিকের সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে এবং ক্লিনিকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ এখনও পাওয়া না গেলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে তারা মাঠে রয়েছে।

শাপলা ক্লিনিকের মালিক ওবায়দুল ইসলাম ফকির অবশ্য দাবি করেছেন, “আমরা সব নিয়ম মেনেই কাজ করেছি, কোনোরকম অবহেলা ছিল না।”

তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

@bagerhat24.com