
“মোংলায় ছড়িয়ে পড়ছে ‘মিনি পতিতালয়’: মাদক ও যৌনতার অন্ধকারে কিশোরদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন”
01/01/1970 12:00:00মাসুদ রানা,মোংলা
মোংলা পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে অবৈধ ‘মিনি পতিতালয়’, যেখান থেকে উঠে আসছে মাদক, দেহব্যবসা ও যৌথ অশ্লীলতার মিশ্র আবেদন। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা হয়তো ভয় সহ্য করতে না পেরে, কিংবা জীবনের প্রয়োজন থেকে—সবকিছু মিলিয়ে এক ভয়াবহ সামাজিক সংকট তৈরি হচ্ছে।
সাক্ষাতকার ও অনুসন্ধানে জানা যায়, কলেজ রোড (৭ নম্বর), কুমারখালি, বেড়িবাঁধ, এনিও পাড়া, চরকানা, বটতলা, মাছমারা রোডসহ চলচিত এলাকায় ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট ও বাড়িতে চলছে মাদক ও দেহব্যবসার এক ভয়াবহ হাট। এসব স্থানে নিয়ন্ত্রণ করে এক ধরনের ‘দালাল চক্র’, যারা অচেনা নারীদের ভাড়া ঘরে ভোগ দখলের জন্য এনে, মাদক ও যৌনতা মিলিয়ে পরিচালনা করে স্থানীয় অন্ধকার ব্যবসা।
পৌর ভবনের পাশেই মরিয়ম নামের এক নারী রাত-দিন মদ এবং ইয়াবার সেবন ও দেহব্যবসা পরিচালনা করছেন। বার বার বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে, বর্তমানে ব্যবসায় প্রবেশের জন্য তিনি স্থান বরাদ্দ দিয়েছেন—মৌসুমী ও মীম নামের দুই নারীকে দিয়ে দেহব্যবসা করানো, যুবকদের ভাড়া রুমে এনে অনৈতিক কার্যক্রম করানো এসবেও লিপ্ত তিনি।
স্থানীয় বিস্মিত হলেও প্রতিবাদ করেন—“মনে হয় প্রশাসন, হয়তো রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে, ব্যবস্থা নিচ্ছে না।” অভিযোগ রয়েছে যে, প্রশাসনসহ অনেকে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সব ম্যানেজ করছেন এমন প্রভাবশালী কোনো মহিলার পেছনে।
দালালরা খুঁজে আনছেন খুলনা ও আশপাশ থেকে নারীদের, যাদের পেটের দায়ে এসব পথে নামতে বাধ্য হতে হয়। একজন যৌনকর্মী জানান, “সন্ধ্যাবেলায় কাস্টমার বেশি, কেউ ঘণ্টা-পাঠ, কেউ রাতভর চুক্তি করে; অধিকাংশই হচ্ছে মাদকাসক্ত তরুণ।” মোংলার প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরদারির অভাবে এসব কার্যকলাপ নির্ভয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
জানা গেছে, কুমারখালি ব্রিজকাছের “ডাঃ সিদ্দিক” বাড়ি—বাস্তবে কেউ ডাঃ নন—সেখানে নিরাপদ আশ্রয়ে খোলা দারিদ্য্য। সেখানে দালাল ও বাড়ির লোক পাহারা দিয়ে, ইয়াবাসেবনের জন্য অনৈতিক স্থান সরবরাহ করে থাকেন।
এক জ্বলন্ত অভিযোগ: ৭ নম্বর কলেজ রোডে শাহ আলম ও তার স্ত্রী আমেনার নিজস্ব বাড়িতে ‘মিনি পতিতালয়’—শাহ আলম ও আমেনা সেখানে উঠতি নারীদের এনে অপরাধ ও মাদক বিক্রি করতেন। মোংলা থানা পুলিশ এক অভিযানে ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ রাতে শাহ আলম ও এক যুবতীকে আটক করে।
অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রভাব—আ.লীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা মাসোহারা নিয়ে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত—তথ্য অনুযায়ী, আমেনা ও শাহ আলম মাসিক ম্যানেজ করে আ.conggressর লোকজনকে টাকা দিয়ে, মাঝে মাঝে সেই সাবেক কাউন্সিলর নিজেও সেখানে যাতায়ত করতেন।
এই সাধারণ মানুষের জন্য ভয় ও ক্ষোভ বাড়িয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই অপমান বা চাপ—“ক্ষমতাধরদের মাসোহারা নিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়” বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি, শেহলাবুনিয়া এলাকায় শেহলাবুনিয়া এলাকার উঠতি বয়সি ছেলে মেয়েদের মধ্যে ঝামেলা ছড়িয়ে পড়লে ৯৯৯‑এ কল, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে সরিয়ে নিয়ে আসে—সম্প্রতি আর কোনো নতুন অসামাজিক ঘটনা ধরা পড়েছে না।
বাংলাদেশ সরকারের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির, যিনি নিজে মোংলায় জন্মগ্রহণ—“মোংলার যুবসমাজের ভবিষ্যৎ বিপন্ন; প্রশাসন যেন অবিলম্বে নির্মূল অভিযান শুরু করে, এই দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক”—এসব আশ্বাস ও উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। তিনি প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেছেন।
একইভাবে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) মোংলা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ নুর আলম শেখ বলেছেন, “যুবসমাজকে রক্ষা করতে মাদক ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে; আইনের শাইজ টলারেন্স নেওয়া উচিত।”
মোংলা থানার ওসি মোঃ আনিসুর রহমান জানিয়েছেন—“পুলিশ কঠোর অবস্থানে; অভিজান করবে, বাসা, হোটেল, ফ্ল্যাট শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।”
অবশেষে—স্থানীয় মসজিদের মুসল্লিরাও রাতের অন্ধকারে ভাসমান পতিতা, দালাল ও খদ্দেদের উৎপাতে অতিষ্ঠ। সবার মিলিত অভাবিত প্রত্যাশা হলো, প্রশাসন যেন অবিলম্বে, দৃঢ়ভাবে হাত বাড়ায়।