
ফকিরহাটে দিনব্যাপী হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত
01/01/1970 12:00:00পি.কে.অলক,ফকিরহাট
বাগেরহাট জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ও সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচী রোববার (২৪ আগষ্ট) সকাল ৭টা থেকে শুরু ও বিকেল ৫টায় শেষ হয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছিল পিকেটিংয়ের তীব্রতা ততটা বেড়েছিল। হরতাল-অবরোধ চলাকালে খুলনা-মোংলা, বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জ মহাসড়কে শতশত যানবাহন আটকা পড়ে যায়। এতে যাত্রী সাধারন ও পধচারীরা পড়ে যান মহাবিপাকে। শতশত নারী পুরুষ শিশু কিশোর ও বৃদ্ধবৃদ্ধাকে পায়ে হেটে বিভিন্ন স্থানে চলাচল করতে দেখা গেছে।
উপজেলার কাটাখালী মোড়, টাউন নওয়াপাড়া মোড়, ফকিরহাট বিশ^রোড মোড় ও ফলতিতা-বটতলা সহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, সড়ক মহাসড়কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষ সড়কে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করছেন। রাস্তায় রাস্তায় টায়ার জালিয়ে প্রতিবাদ সভা পালন করছে। তবে জরুরী সেবা ও এম্বুলেন্স চলাচল করার সুযোগ করে দিয়েছেন পিকেটিংয়ে থাকা লোকজন। এদিকে বাগেরহাটের ফকিরহাটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্র্থীদের উপস্থিত দেখা যায়নি।
তবে এদিনের অভ্যান্তরিন পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে ফকিরহাটের সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে জরুরী প্রয়োজনে কিছু ফার্মেসী হোটেল রেস্তোরা খোলা ছিল। হরতালের সমর্থনে সড়কগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে জেলা ও উপজেলা বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় একযোগে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচী পালিত হওয়ার খবর শোনা গেছে। বাগেরহাট জেলা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ব্যানারে এই হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচিতে ফকিরহাট উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের সতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
সকাল ও দুপুরে কাটাখালী বাসস্ট্যান্ডের গোল চত্তরে চারটি আসন বহাল রাখার দাবীতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তৃতা করেন, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মুজিবর রহমান, কেন্দ্রিয় বিএনপি নেতা কৃষিবিদ শামীম আহম্মেদ, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা রেজাউল করিম, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির এ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মদ ইউনুস, জেলা যুব দলের সাবেক সভাপতি ফকির তারিকুল ইসলাম, বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ইনর্চাজ ডাঃ অসিম কুমার সমাদ্দার, ফকিরহাট উপজেলা বিএনপি’র নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ কামরুল ইসলাম গোরা, সাধারণ সম্পাদক শেখ শরিফুল কামাল কারিম, জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা তৈয়বুর রহমান, সেক্রেটারী আবুল আলা মাসুম সহ জেলা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন ও বক্তৃতা করেন।
বক্তৃতায় নেতৃবৃন্দরা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাগেরহাট জেলায় চারটি সংসদীয় আসন বহাল ছিল। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনার একটি আসন কমানো প্রস্তাব জেলাবাসীকে হতাস করেছে। আমদের বঞ্চিত করা চলবেনা। তাঁরা আরো বলেন নির্বাচন কমিশন তার প্রস্তাব থেকে সরে না আসলে মোংলা বন্দরসহ বাগেরহাট জেলাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে লাগাতর কঠোর আন্দোলন করা হবে। বাগেরহাটের একটি সংসদীয় আসন কমানোর প্রতিবাদে ইতিমধ্যে বাগেরহাট জেলাজুড়ে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির বিক্ষোভ মিছিল, স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি আসন ছিল। ৩০ জুলাই দুপুরে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি অংশ কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তার দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর পর থেকেই বাগেরহাট জেলাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। একের পর এক কর্মসূচি দিতে থাকে জেলা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি।
এর অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক ও নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে স্মারকলিপি, ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বাগেরহাট-খুলনা-মোংলা-ঢাকা রাস্তা অবরোধ এবং সর্বশেষ রবিবার দিনব্যাপী বাগেরহাট জেলায় সর্বাত্মক হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আসন কমানো অথবা বহাল রাখার বিষয়ে ২৫ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।