Logo
table-post
মোংলায় মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য: আতঙ্কে সাধারণ মানুষ, অভিযানে সক্রিয় প্রশাসন
01/01/1970 12:00:00

 

মাসুদ রানা,মোংলা

মোংলায় মাদক ব্যবসা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। পৌর শহরের নয়টি ওয়ার্ড ও আশপাশের গ্রামগুলোতে দিন-রাত নির্বিঘ্নে চলছে ইয়াবা, গাঁজা, বাংলা মদ ও বিদেশি মদ বিক্রি। এ নিয়ে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হলেও ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শহরের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা থেকে শুরু করে পাইকারি মাদক ব্যবসায়ীরা সক্রিয়। তাদের মধ্যে কেউ সরাসরি বিক্রি করে, কেউ আবার ভাড়াটে লোক দিয়ে ব্যবসা চালায়। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত ভবনেও চলছে মাদক সেবন ও বিক্রির আসর। অভিযোগ রয়েছে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতেও পৌঁছে যাচ্ছে ইয়াবা।

চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের কার্যকলাপ
পৌর শহরের কবরস্থান রোড, মাদ্রাসা রোড, কুমারখালি, নারকেলতলা, বাজার এলাকা, সিগনাল টাওয়ার এলাকা, বান্ধাঘাটা ও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অসংখ্য মাদক ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছে। কেউ পাইকারি ইয়াবা ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে এনে সরবরাহ করছে, আবার কেউ খুলনা ও ফেনি থেকে গাঁজা ও ইয়াবা আনছে। এদের মধ্যে কয়েকজন নারীও বড় পাইকারি সরবরাহকারী হিসেবে পরিচিত।

 

চিহ্নিত ব্যবসায়ী

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলার  অনেকে জানিয়েছেন, ও  প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে যেসব এলাকার  চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের নাম জানা যায়,

 

সে সকল  মাদক ব্যাবসায়ীরা হলো, কবর স্থান রোড এলাকার বড় পুকুর পাড়ের খাদেম মজিবরের ছেলে  রুবেল,  চোরা সাইন, আব্দুল্লাহ, গাঁজা বিক্রেতা কবির, জুয়েল, শাহাদৎ,দুখু। মাদ্রাসা রোড এলাকার খুচরা ব্যাবসায়ী নজরুল নজু, হোসেন, কুমাড়খালি এলাকার আকবার, নারকেল তলা আবাসন এলাকার হিজরা জাবেদ   , মালগাজী এলাকার মাজা, বাজার এলাকার বেবী, সাদ্দাম, সিগনাল টাওয়ার এলাকার সিগনাল টাওয়ার এলাকার এমরান, আল-আমিন, দেলো, রুবেল, জাহিদ,আনোয়ার, তাহেরের মোড় এলাকার মোহাম্মদ আলী গ্রিক, অবৈধ বাংলা মদ বিক্রেতা মালেক, বান্ধা ঘাটা এলাকার ইয়াবা সেলিম, সেলিমেরর ছোট ভাই  ডালিম, বিএলএস রোডের বড় পুকুর পাড়ের গাঁজা বিক্রেতা রবিউল, রাজ্জাক সড়কের ও বর্তমান কাইনমারি এলাকার মাদক ব্যাবসায়ী তিশা, তিশার আপন ভাই রনি, ও তিশার পুরো পরিবারের সদস্য, লুৎফরের ছেলে মেহেদী,  গাঁজা বিক্রেতা ইসমাইল, ৫ নং ওয়ার্ড  বাজার এলাকার সালমা, ছাড়াবাড়ির এলাকায় লিটন, কুমাড়খালী এলাকার লিটন, তাহেরের মোড় এলাকার  মোহাম্মদ আলী  গ্রিকের ছেলে জাহাঙ্গীর, জোহরা কমিশনারের ছেলে শুভ, নুরু, বাচ্চু, আলাল, মগা শহিদ, বেড়ি বাধের সাদ্দাম, বেবীর মেয়ের জামাই রাসেল, নফর আলীর ছেলে ইসমাইল, সম্রাট, 

 

মোংলা পৌর শহরের ৪ নং ওয়ার্ডের  শিল্পাঞ্চল এলাকার মাদক  ব্যাবসায়ীরা হলো, 

 সরকার মার্কেট এলাকার এস. এম মনির, মংলা বাস স্ট্যান্ড এলাকার  রাসেল, ডালিম, তামিম, জহিরুল, দিগরাজ বালুর মাঠ এলাকার  শফিক এরাই  ইয়াবা ও গাঁজার খুচরা বিক্রেতা বলে জানা গেছে। 

 

 

 

পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ড 

বালুর মাঠ এলাকার জাহাঙ্গীরের বৌ তানিয়া গাঁজার পাইকারি বিক্রেতা - খুলনা থেকে  এ গাঁজার  আনে তানিয়া। তানিয়ার গাঁজা সরবারাহের কাজে তার দুই জন সহযোগী রয়েছে রুবি ও জুলফুর ছেলে বাদশা। তানিয়া কিছুদিন ইয়াবার ব্যাবসা করেছেন বলে জানা যায়। 

 

মোংলা শহরের পাইকারি ইয়াবার ব্যাবসী হলো,

কবর স্থান রোডের রুবেল, উপজেলা সংলগ্ন পলাশ, সামসুর রহমান রোডের মোকতার, পলাস সন্ধ্যার পর পাইকারি ইয়াবা বিক্রির জন্য প্লাটিনাম মোটরসাইকেলে করে সারা শহরে খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছে   ইয়াবা পৌছে দেন তিনি। 

 

ইয়াবার  পাইকারি বিক্রেতা আফসার উদ্দিন সড়কে কবীর। কবিরের ইয়াবা আসে ফেনি জেলা থেকে। তার ইয়াব বিক্রি হয় কার্গো জাহাজের মাদক সেবীদের কাছে এই জন্য কবীরকে শহরে কম দেখা যায়। কবীর মোংলা নদীতে ইয়াবা সরবরাহ দিয়ে থাকে। 

 

মোংলায় মাদকের বড়  ডিলার আলি হেসেন ও তার  স্ত্রী শারমিন এবং  ৯ নং ওয়ার্ডের  মোসারেফ মোশা   ও তার  দুই স্ত্রী শারমিন ও শিউলি।  এরাই মোংলা পৌর শহরের মরণ নেশা ইয়াবার  বড়  গডফাদার বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খুচরা ইয়াবা ব্যাবসায়ী। আলি হোসেন ও মোসারেফের ইয়াবা আসে টেকনাফ থেকে।  

 

কবর স্থান রোডের  রুবেল এর ইয়াবা আসে চট্রগ্রাম থেকে, শাহাদাত চট্রগ্রাম থেকে ইয়াবা এনে পাইকারি দিয়ে থাকে কবর স্থান রোডের খুচরা ব্যাবসায়ীদের কাছে। বান্ধাঘাটার ইয়াবা সেলিম নিজে ইয়াবা আনেন চট্টগ্রাম থেকে। 

 

নিজ বাড়ীতে প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রয় করে থাকে।  দূর দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন মাদকসেবী ইয়াবা, গাঁজা  ক্রয় করে থাকে এ সকল মাদক ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে। 

মোংলা শহরের আগে যারা মাদকের সম্রাট ছিলেন তাদের নাম লোকমুখে শোনা গেলেও তারা ধরা ছোয়ার বাহিরে। প্রশাসন সম্প্রতি তাদের বাসা বাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করলে তাদের কাছ থেকেও ছিটে ফাঁটা কোন মাদক উদ্বার করতে সক্ষম হয় নি। তারা অনেকেই এখন পৌর শহরে বসবাস করে না। আবার কেউ মৃত্যু বরণ করেছে।

 

অভিযান ও প্রশাসনের পদক্ষেপ
মোংলা থানা পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মাদক জব্দ হয়েছে এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে জামিনে মুক্ত হয়ে কিছু ব্যবসায়ী আবারও পুরনো ব্যবসায় ফিরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, "মাদক ব্যবসায়ীরা দেশ ও জাতির শত্রু। সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব নয়।"


মোংলা প্রেস ক্লাব সভাপতি আহসান হাবিব হাসানও কঠোর আইন প্রয়োগ ও জামিন রোধের দাবি জানিয়েছেন।


মোংলার ইউএনও শারমিন আক্তার সুমী জানান, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে।


থানার ওসি মো. আনিসুর রহমান জানান, শুধু জুলাই মাসেই মাদকের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়েছে এবং নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি
মোংলাবাসীর প্রত্যাশা, প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযান ও সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে শিগগিরই মাদকমুক্ত মোংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

@bagerhat24.com