
সংসদীয় আসন কমানোর প্রস্তাবে বিক্ষোভে উত্তাল বাগেরহাট, ক্ষোভে ফুঁসছে জনগণ
01/01/1970 12:00:00স্টাফ রিপোর্টার
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত আসন পুনর্বিন্যাসে বাগেরহাট জেলার চারটি আসনের একটি বাদ দেওয়ার খবরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এই খসড়া অনুযায়ী, বাগেরহাটে আসন সংখ্যা কমে তিনটি হতে পারে বলে জানানো হয়।
বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ভোটার সংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় এই সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে। বিশেষায়িত কারিগরি কমিটির সুপারিশে যেসব এলাকায় ভোটার কম, সেখানে আসন কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এই ঘোষণার পরপরই বাগেরহাট জেলাজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ—সবাই একবাক্যে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, "বাগেরহাট বরাবরই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। এখন যদি আসন কমে, তাহলে আমাদের সমস্যাগুলো জাতীয় পর্যায়ে আরও গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।"
পিসি কলেজের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমরা যারা উন্নয়ন চাই, তারা এ খবরে হতাশ। আগে যেখানে চারটি আসনেও তেমন উন্নয়ন হয়নি, এখন তা কমলে কীভাবে উন্নয়ন আসবে?”
ছাত্রনেতা শেখ আল মামুন বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আমাদের প্রতি অবিচার। আমরা চারটি আসন চাই—আরো বাড়ানো উচিত ছিল, কমানো নয়।”
বিএনপি নেতা খান মনিরুল ইসলাম মনে করেন, সুন্দরবন, মোংলা বন্দর, ষাটগম্বুজ মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার জেলা বাগেরহাটকে একটি আসন কমিয়ে দেওয়ার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তাঁর ভাষায়, “বাগেরহাটের ভূগোল, জনসংখ্যা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য—সবই প্রমাণ করে এটি চারটি আসনেরই জেলা।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এটিএম আকরাম হোসেন বলেন, “১৯৮৪ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি আসন রয়েছে। এটি শুধু সংখ্যা নয়, আমাদের সম্মান, ইতিহাস ও অধিকার। আসন কমানো মানে আমাদের দাবিগুলোকে দমন করা।”
জামায়াত ইসলামীর জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম এই সিদ্ধান্তকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “বাগেরহাটকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা চলছে। আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনের খসড়া অনুযায়ী বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, ফকিরহাট, মোল্লাহাট), বাগেরহাট-২ (সদর, কচুয়া, রামপাল) এবং বাগেরহাট-৩ (মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা) এলাকায় নতুন সীমানা নির্ধারণ হতে পারে। এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে পাস হলে বাগেরহাট-৪ নামক আলাদা কোনো আসন থাকছে না।
এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন জনমতের এই প্রবল বিরোধিতার মুখে তাদের সিদ্ধান্তে পুনর্বিবেচনা করে কি না।