
সুন্দরবনের বুকে শিকারিদের ছড়াছড়ি: ৬০০-র বেশি হরিণ ফাঁদ উদ্ধার, অপরাধীরা অধরা
01/01/1970 12:00:00মোংলা থেকে মাসুদ রানা
সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলে হরিণ শিকারের ভয়াবহতা যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। রোববার (১৬ জুন) সন্ধ্যায় পূর্ব সুন্দরবনের কোকিলমনি টহল ফাঁড়ি ও টিয়ারচর এলাকায় গোপন অভিযানে বন বিভাগ উদ্ধার করেছে ৬০০-রও বেশি হরিণ শিকারের ফাঁদ এবং নিষিদ্ধ কাঁকড়া ধরার ১৬টি চারু। তবে অভিযানের আগেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, নিয়মিত ফুট প্যাট্রোলের অংশ হিসেবে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বনকর্মীরা গোপনে অভিযান চালিয়ে এই বিপুল সংখ্যক ফাঁদ উদ্ধার করেন। শিকারিরা নিজেদের রক্ষায় ফাঁদগুলো মাটির নিচে পুঁতে রেখে গা-ঢাকা দেয়।
তিনি বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি বন অপরাধ দমনে। শিকারিরা আমাদের গতিবিধি আঁচ করতে পেরে আগেভাগেই স্থান ত্যাগ করে। তবে উদ্ধার করা ফাঁদ ও সরঞ্জামাদি কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে হেফাজতে রাখা হয়েছে।”
এর আগেও ১৩ জুন চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশন এলাকায় ১৩৫টি ফাঁদ উদ্ধার করা হয়েছিল। এর মধ্যে হুলার ভারানী সংলগ্ন খাল থেকে ৮২টি এবং সূর্যমুখী খালের পাশে থেকে ৫৩টি ফাঁদ জব্দ করা হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
এতগুলো অভিযানের পরও অপরাধীরা বারবার রক্ষা পাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে বন বিভাগ ও গোয়েন্দা তথ্যের কার্যকারিতা নিয়ে। স্থানীয়রা বলছেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে একটি সংঘবদ্ধ ও প্রভাবশালী শিকারি চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। তাদের আগাম বার্তা পেয়ে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার পেছনে দুর্বল গোয়েন্দা তৎপরতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
পরিবেশবিদদের মতে, হরিণ শিকার বন্ধ না হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়বে। শুধুমাত্র আইনি পদক্ষেপ নয়, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা এবং প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করার সময় এসেছে।
বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “সততা ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে শীঘ্রই বন অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।”