
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানছেনা ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসন ও ইজারাদাররা
01/01/1970 12:00:00ভান্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌরসভায় সড়ক ও মহাসড়কে সরকারী আদেশের প্রতি তোয়াক্কা না করে যানবাহনের কাছ থেকে বেপরোয়াভাবে অতিরিক্ত টোল আদায় করছে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের লোকজন।
এ অবৈধ টোল দিতে না চাইলে প্রায়ই পরিবহন শ্রমিকরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। সড়কে মহাসড়কে অতিরিক্ত টোল আদায়ে যাত্রীদের গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। ভাণ্ডারিয়ায় সড়কে মহাসড়কে টোল আদায়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উচ্চ আদালত বিভাগ থেকে রুল জারি করা হলেও মানছে না কেউ।
টোল আদায়কারী ইজারাদার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রী কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সহ- সভাপতি মো. জুয়েল মৃধা। তিনি জবরদস্তি অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
টোল আদায়ে হয়রাণি বন্ধে স্থানীয় মো. নেসার উদ্দিন জিহাদ মিয়া সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করেন।
ইজারাদার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মোঃ জুয়েল মৃধা সহ সাতজনকে বিবাদী করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ৭২৯৩ নং রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি ফাতেমা নাজিব ও বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজির বেঞ্চ গত ১৩ মে বিবাদীদের বিরুদ্ধে যানবাহন থেকে টোল আদায় কেনো বে-আইনি নয়, এই মর্মে একটি রুল জারি করে। সেই আদেশ উপেক্ষা করেও পৌরসভার ব্যস্ততম এলাকায় যানবাহন থামিয়ে দ্বিগুন টাকা ধার্য করে জোরজবরদস্তি টোল আদায় করছে সুবিধাভোগী মহলটি।
হাইকোর্টে রীট আবেদনকারি বলেন, আমি জনস্বার্থে তিনি এই রিট করেছি। বাংলাদেশে কোথাও দেখিনাই সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা দিয়ে যে কোন পরিবহন চলাচল করতে হলে পৌর সভার টোল দিয়ে হয়। ভাণ্ডারিয়া শুধু পৌর টোল দিতে হচ্ছে এ কারণে রিট করা হয়েছে। এটি হয়রাণি ও বেআইনি।
জানাগেছে, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা এলাকার সড়কে বিভিন্ন যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায়ের জন্য তৎকালীন ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার প্রশাসক মো. ইয়াছিন আরাফাত রানা পৌর টোল আদায়ে শহরের ৬টি স্থানে ইজারা দেন। স্থান গুলি হচ্ছে ভূবনেশ্বর সেতুর দক্ষিণ পার ১১ লাখ ৫৮হাজার ৩৭৫ টাকা, এনায়েত খান সেতুতে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ১২৫ টাকা, শহরের প্রাণকেন্দ্রর ওভারব্রীজের পশ্চিম পার ১ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, সোনার তরী কাউন্টারের সামনে ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকা, আলফা মসজিদের সামনে ১৮লাখ ৩৩ হাজার ৭৫০ টাকা, বাসষ্ট্যান্ড ৩১লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
ভাণ্ডারিয়া পৌরসভা দেশের দক্ষিণ জনপদের যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হওয়ায় দৈনিক ছোট বড় মিলিয়ে কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে । এছাড়া শহেরর অভ্যন্তরীণ সড়কেও প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। ২০১৫ সালে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা শহর পৌরসভায় রূপান্তরিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর তারিখে ৪৬.০০.০০০০.০৬৩.৩১.০০২.১৩-২২৫৪ নম্বর স্মারকে টোল আদায় না করার জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু সরকারি নির্দেশের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে একটি সুবিধাবাদী মহল ইজারা নিয়ে টোল আদায় শুরু করে। প্রশাসন টোল আদায় বন্ধ করতে পারেনি। উপরোন্ত গত ০৬-০৩-২০২৫ ইং তারিখে ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসক ভাণ্ডারিয়া উপজেলার রাজপাশা গ্রামের মোঃ জুয়েল মৃধাকে পৌরসভার টোল আদায়ের ইজারা প্রদান করে। এরপর থেকে সড়ক পরিবহনে টোলের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে একটি মহল। দরিদ্র পরিবহন শ্রমিকরা এই অবৈধ টোল দিতে না চাইলে তাদের উপর জোরজবরস্তি করা হয়। মাঝেমধ্যে টোল আদায়কারীদের কাছে নাজেহাল হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। সড়কে গাড়ি থামিয়ে ইচ্ছেমত টোল আদায়ে শহরের যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক দুলাল হোসেন বলেন, অবৈধ টোলের কারনে পরিবহনে বাড়তি ভাড়া গুনতে যে সাধারণ মানুষকে। সেই সাথে সড়কে হয়রাণির শিকার হন জনসাধারণ।
অথচ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ টার্মিনাল ছাড়া সব সড়ক ও সহাসড়ক থেকে টোলের নামে চাঁদা আদায় বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ও প্রভাবশালী ইজারাদাররা তা মানছেন না।
এ ব্যাপারে ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আক্তার অবৈধ টোল উত্তোলনের বিষয় বলেন, আমি কর্মস্থলে অতি সম্প্রতি যোগদান করেছি এখানে টোল আদায়ে পূর্বে ইজারা দেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা পেয়েছি, নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ টোলের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।