Logo
table-post
রামপালে ভুল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু, সিলগালা হলো সুন্দরবন হাসপাতাল
01/01/1970 12:00:00

এম,এ সবুর রানা

রামপাল উপজেলার ফয়লা বাজারে অবস্থিত বেসরকারি ‘সুন্দরবন (প্রা.) হাসপাতাল’ আবারও আলোচনায়। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের ভুলের ফলে তানিয়া বেগম (২০) নামের এক তরুণ প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সোমবার (২৬ মে) রাতে, মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে।

তানিয়া ছিলেন ছোট নবাবপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং ফেরদৌসের স্ত্রী। জানা যায়, অস্ত্রোপচারের পূর্বে কোনও ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা না করেই অপারেশনের জন্য নেওয়া হয়। অভিযুক্ত চিকিৎসকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অপারেশন থিয়েটারে নিরাপত্তা ও জরুরি চিকিৎসা সেবার ন্যূনতম মানটুকু মেনে চলাও হয়নি। অপারেশনের সময় উপস্থিত ছিলেন না এমবিবিএস সহকারী, ছিল না প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও।

হাসপাতালের এই অনিয়মের ঘটনা জানাজানি হলে মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুকান্ত কুমার পাল হাসপাতালটি পরিদর্শন করেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই অস্ত্রোপচারের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন।

ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র:
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, প্রতিটি অস্ত্রোপচারে সার্জনের সহকারী হিসেবে থাকতে হবে একজন এমবিবিএস ডাক্তার এবং সঠিক এনেস্থেসিয়ার জন্য অনুমোদিত বিশেষজ্ঞ। অথচ ‘সুন্দরবন হাসপাতালে’ এসবের কোনো বালাই ছিল না। ওটি রুমে ছিল না মনিটরিং সিস্টেম, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর এমনকি কাজের উপযোগী এনেস্থেসিয়া যন্ত্রপাতিও নয়। এই পরিস্থিতিতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন করা হয় তানিয়ার ওপর।

অপারেশনের পর পরিস্থিতি খারাপ হলে তানিয়াকে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সেটেলমেন্টের চেষ্টা ও জনরোষ:
মৃত প্রসূতির পরিবার অভিযোগ করেছে, হাসপাতাল পরিচালক নাজমুল হাসান রিয়াজ মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মানবাধিকার সংগঠন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, "এই ক্লিনিকে কোনরকম সরকার অনুমোদিত যন্ত্রপাতি ছিল না, থাকেনি নিবন্ধিত চিকিৎসক। তাই হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

পুরোনো অভিযোগ ও দুর্নীতির ইঙ্গিত:
এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আগে থেকেই একাধিক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, এ পর্যন্ত ১৫ জন নারী প্রাণ হারিয়েছেন ভুল চিকিৎসায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী নেতা ও সুবিধাভোগী সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই এতদিন এই অনিয়ম আড়ালে রাখা হয়েছে।

সচেতন মহলের উদ্বেগ:
সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, এ ধরনের হাসপাতালে নজরদারি না থাকলে, কোনো সরকারি বিধিই কার্যকর হবে না। তাই এখনই সময় সকল বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স যাচাই ও নতুন করে মূল্যায়ন করার।


@bagerhat24.com