
বাগেরহাটে ভারতীয় নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু: নির্বাচন কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যানসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
01/01/1970 12:00:00নিজস্ব প্রতিবেদক
বাগেরহাটে দুদক (দূর্নীতি দমন কমিশন) ভারতীয় নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যুতে নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনা সদস্যসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে যে, পারস্পরিক যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুই ভারতীয় নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়েছে। আসামিরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমান বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার, চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন ও চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা সাবেক সেনা সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন মোল্লা। এই মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিনকে।
অভিযোগ অনুযায়ী, দুই ভারতীয় নাগরিক—শ্রী ফনি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডল এবং প্রতুল চন্দ্র মণ্ডল—চিতলমারী থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করেন। তাদের জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয় যথাক্রমে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি ও ১৯৫৩ সালের ৪ এপ্রিল। তবে, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয় ২০১৭ সালে, যা তাদের প্রকৃত বয়সের তুলনায় অনেক পরবর্তী সময়।
তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে যে, ফনি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বাবার নাম মৃত শশধর মণ্ডল উল্লেখ করা হলেও, তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম মৃত রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল। এছাড়া, ভোটার নিবন্ধন ফরমে বাবার মৃত্যুর বছর ১৯৪৪ উল্লেখ করা হলেও, ফনি ভূষণের জন্ম তারিখ অনুযায়ী পিতার মৃত্যুর ৪ বছর পর তার জন্ম হওয়ার কথা। ফরমে শনাক্তকারী হিসেবে সুষেন মণ্ডলের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এছাড়া, ফনি ভূষণের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয়েছে বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা গ্রাম, তবে তদন্তকালে ওই এলাকায় তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
দুদক, বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, পারস্পরিক যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উক্ত ব্যক্তিকে বিধিবহির্ভূতভাবে জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে, যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এই ঘটনায় বাগেরহাটে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুদকের এই পদক্ষেপ প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।