
মোরেলগঞ্জে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ৫ জয়িতা
01/01/1970 12:00:00মেহেদী হাসান লিপন, মোরেলগঞ্জ
বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য স্ব মহিমায় উজ্জ্বলতার সাক্ষর রেখেছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৫ জয়িতা। জিতেও নিয়েছেন শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা। এরা হলেন সফল জননী নারী হিসেবে যহোরা বেগম, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে হোসনে আরা বেগম ,অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে দুলালী বেগম, সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য সাদিয়া সুলতানা ও নির্যাতনের বিভীষিকাময় জীবন মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা সফল নারী হিসেবে মুন্নি খানম ।
সফল জননী হিসাবে যিনি ইতোপূর্বে প্রশংসিত হয়েছে তিনি হলেন উপজেলার বারইখালী গ্রামের সফল যহোরা বেগম। ৬ ছেলে ও ১ কন্যা সন্তানের জননী। পল্লী গ্রামে বসবাস করেও তিনি সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছেন। স্বামী মো: জিন্নাত আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ছিলেন। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে তিনি তার সন্তানদের শিক্ষা দেয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেচন। আর এ কারনেই সফলতা ধরা দিয়েছে তাদের জীবনে। তার ছেলে একজন এমবিবিএস ডাক্তার ,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্যরা নিজ নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসাবে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেগম সকলের কাছে একজন পরিচিত মুখ। তিনি ১০৭ নং বারইখালী সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি শিক্ষিকা থাকাকালীন ও অবসরকালীনও বিভিন্ন সমাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী হোসনে আরা ওরফে হাসি শিক্ষকতা জীবনে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদিকা, সহ-সভানেত্রী, জেলার সহ-সম্পাদিকা, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক বিষয়ক সদস্য ও উপজেলা স্কাউট কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন।
আর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী উপজেলার পশ্চিম বারইখালী গ্রামের মো.এসাহাক আলীর মেয়ে দুলালী বেগম। লেখাপড়ার করার প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ৬ বোন ও পিতার আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে হয়ে ওঠেনি। বিয়ে হয় ১৯৯১ সালে। স্বামী একজন সামান্য প্রান্তিক চাষি। স্বামী সংসারেও নুন আনতে পানতা ফুরায়। নিজের পায়ে দাড়ানোর ইচ্ছা নিয়ে ব্র্যাক থেকে ১ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে হাঁস মুরগী ছাগল পালন শুরু করে। ২০০৮ সালে গড়ে তোলেন হাঁস মুরগী পালনের খামার। বর্তমানে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। এ আয়ে দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন। সব মিলিয়ে নিজেই একজন সফল ও স্বাবলম্বী নারী।
সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন পৌর সদরের ৭ নং ওয়ার্ডের সাদিয়া সুলতানা। তার পিতা গ্রাম সরকার ও একাধিকবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য ছিলেন। জনসেবা ও সমাজ উন্নয়নে তার নানা অবদান রয়েছে। পিতার সমাজ উন্নয়ন কার্যক্রমে তিনি অনুপ্রাণিত হন।এসএসসি পাশের পর বিয়ে হয় তার।শ্বশুর ও ইউপি সদস্য ছিলেন। সমাজ সেবার উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৬ সালে পৌর সভার সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।সমাজের বাল্যবিবাহ,নারী ও শিশু, নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধ, যৌতুক প্রতিরোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। অবহেলিত নারীদের পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধান ও আইনগত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যার কারনে ২০২১ সালে পুনরায় কাউন্সিল নির্বাচিত হন।
স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে জীবন সংগ্রামে বেঁচে থাকার অদম্য শক্তি নিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন উপজেলার ভাটখালী গ্রামের মরহুম শহর আলী মাঝির কন্যা মুন্নি খানম। কৃষক পিতার অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে মধ্যে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ২০০৭ সালে এক মোটর সাইকেল ড্রাইভারের সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর যেতে না যেতেই যৌতুকের কারনে স্বামী শ্বশুরের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। স্বামীর নেশার টাকার জন্য প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন সইতে হতো। এক পর্যায়ে স্বামী তাকে না জানিয়ে দুই সন্তান নিয়ে এক বছর নিরুদ্দেশ থাকে। সন্তানদের নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন মুন্নি খানম। পরে এক আত্মীয়ের পরামর্শে টেইলারিংয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহন করে দর্জি কাজ শুরু করেন। আর এ থেকে অদম্য পরিশ্রম করে এখন নিজে স্বচ্ছল হতে সক্ষম হয়েছেন। স্বামী ফিরে এসেছে। তাকে নিজ উপর্জনের অর্থে মোটর সাইকেল কিনে দিয়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাই বসত ঘর তৈরি করেছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী জীবন যাপন করছেন।