
সুন্দরবনে জীবনঝুঁকি নিয়ে কাজ, আয় নেই—ক্ষতির মুখে জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালিরা
01/01/1970 12:00:00সুন্দরবনে মাছ, মধু ও গোলপাতা আহরণে নানা বাধা; পাস-পারমিটের খরচও তুলতে পারছেন না বনজীবীরা
স্টাফ রিপোর্টার
সুন্দরবনের গহীনে প্রতিদিন জীবন ঝুঁকি নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন বনজীবীরা। কেউ মাছ ধরে, কেউ মধু সংগ্রহ করে, আবার কেউ গোলপাতা বা ছন সংগ্রহে জঙ্গলে ঢোকেন। কিন্তু তাদের আয় এখন এতটাই কমে গেছে যে, অনেকে পাস-পারমিট নেওয়ার খরচও তুলতে পারছেন না।
বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনের আশেপাশের পাঁচ জেলার প্রায় ২ লাখ বনজীবী ১২ হাজারের বেশি ট্রলার-নৌকা নিয়ে মাছ, কাঁকড়া, মধু, মোম, গোলপাতা ও মালিয়া ছন আহরণে জড়িত। এসবের জন্য সরকার নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাস-পারমিট সংগ্রহ করতে হয়।
বিশেষ করে বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলাচর, আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালারা চর অঞ্চলে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে বৃহৎ শুঁটকি আহরণ মৌসুম। গত মৌসুমে ৭৫ হাজার কুইন্টালের বেশি শুঁটকি সংগ্রহ হলেও আয় হয়েছে খুবই কম।
জেলে মো. জাহিদ বহাদ্দার ও ফরিদ আহমেদ জানান, "চরে বিশুদ্ধ পানি নেই, চিকিৎসা নেই, দুর্ঘটনা হলে কেউ পাশে দাঁড়ায় না। পানি-জনিত রোগে বহু জেলের মৃত্যু হয় প্রতিবছর।"
সুরক্ষা সংকটও বড় বাধা।
চরে আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে প্রতিবছর প্রাণহানি ঘটে। ফলে প্রতিবার সমুদ্রযাত্রায় ভয় নিয়ে যেতে হয় জেলেদের।
মৌয়াল নুরুল ইসলাম বলেন, “মধু আহরণ করতে গেলে নৌকা মেরামত, খাবার, মহাজনের দাদন—সব মিলিয়ে যা আয় করি, তা শেষ পর্যন্ত কিছুই থাকে না।”
গত মৌসুমে ২ হাজার ৪৫০ জন মৌয়াল ৩৬৫টি পাসে প্রায় ৯৫৩ কুইন্টাল মধু ও ২৮৬ কুইন্টাল মোম সংগ্রহ করেছিল। একই সময়ে ৪৫০টি নদী-খাল থেকে ৭৫০ টন ইলিশ ও ১৭ হাজার কুইন্টাল মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা হয়।
এদিকে, একটি চক্রের বিষ প্রয়োগে নদী-খালের মাছও ধ্বংস হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিজিৎ সরকার ও ইসমাইল মহানাজ। এতে প্রাকৃতিক মৎস্য ভাণ্ডার যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি প্রকৃত জেলেদের আয়ও পড়ছে ধসে।
বাওয়ালি এনাম হোসেন বলেন, “মালিয়া ছন ও গোলপাতার চাহিদা নেই বললেই চলে, লাভের মুখ দেখি না।”
বন বিভাগের মন্তব্য:
ডিএফও মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও বনজীবীদের আগ্রহ কিছুটা কমে গেছে। ফলে চলতি মৌসুমে আহরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনজীবীদের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ন্যায্য আয় নিশ্চিত না হলে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার পরিবারের জীবন জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়বে।