Logo
table-post
একমাত্র ছেলের শোক ভুলতে ছাত্রদের মিছিলে যান মাহফুজের পিতা
01/01/1970 12:00:00

মশিউর রহমান মাসুম
‘মাহফুজ আমাকে ফাকি দিয়ে চলে গেছে। আগের রাতে বলেছিলো তোমরা দেখ আবু সাইদকে কিভাবে পাখিরমত গুলি করে মারলো। আমার ভালো লাগেনা। আমিও মিছিলে যাবো। আমি সাবধানেই থাকবো। তোমরা এতো ভাবো কেন?’ মা-বাবাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য ১৮ জুলাই রাতে খাবার সময় কথাগুলো বলেছিলো মাহফুজুর রহমান(১৭)। পরদিন ১৯ জুলাই শুক্রবার মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় জুমার নামাজ শেষে বৈসম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মিছিলে নেমে সে গুলিবিদ্ধ হলে মারা যায়। সে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বাইনতলা গ্রামের আব্দুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে।

মাহফুজের পিতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান বলেন, ১৯ আগস্ট মাহফুজ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ২০ আগষ্ট সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তার লাশ খুজে পাই। কানের নিচ থেকে গুলি এপাশ ওপাশ ভেদ করেছে তার। পোস্ট মর্টেম করাতে কমপক্ষে ৭ দিন সময় লাগবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য দেওয়ায় ওই দিনই পোস্ট মর্টেম ছাড়া হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে রাত ১০টায় বাইনতলা গ্রামে পৌছান আব্দুল মান্নান। কোনমতে জানাজা নামাজ সেরে পারিবারিক কবরস্থানে মাহফুজকে দাফন করা হয়। দাফনের পরেই গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বরগুনায় চলে যান তিনি।

একমাত্র ছেলের শোক সামলাতে ছাত্রদের মিছিলে সময় দেন আব্দুল মান্নান। মিছিল দেখলে আর মনে কষ্ট থাকেনা। বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীর মিছিল দেখলেও ছুটে যান তিনি। মিছিলে যোগ দিয়ে কষ্ট ভোলার সুযোগটাও পেয়েছেন গত ৫ আগষ্ট। শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগের আগে তিনি নিহিত ছেলের জন্য চিৎকার করে কাঁদতেও পারেননি। পুলিশের তাড়নায় বাড়ি ছেড়ে বরগুনায় আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। ৫ আগস্টের পরে আব্দুল মান্নান বাড়ি ফেরেন।

মাহফুজের স্বপ্ন ছিলো সেনাবাহিনিতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবে। সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু বুলেট সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে তার ও তার পরিবারের।

শোকাহত পিতা আব্দুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, সংসারের হাল ধরার মত আমার আর কেউ রইলোনা। আমার ছেলের জীবনের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে এটাও কম পাওয়া নয়। আমার ছেলের নাম শহিদী তালিকায় থাকবে। তার নামে মিছিল হবে। আর কিছু চাইনা। এতেই আমি গর্বিত। আমার রিজিক সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করে রেখেছেন।

চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে আব্দুল মান্নান আরও বলেন, ‘আমি ঘরে গেলে ওর মা আমাকে প্রশ্ন করে মাহফুজ কোথায়? ওর বোনেরা কাঁদে ভাইয়ের জন্য। ওই সময় কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে নিজের বুকটা ভারি হয়ে ওঠে’।

আব্দুল মান্নান ২০১০ সালে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঢাকা চলে যান। ৩ মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরে স্ত্রী বেগম বিবি ও ছেলে মাহফুজকে নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকেন। সেখানে একটি দোকানে কাজ নেন। মাহফুজ বড় হয়। তাকে ভর্তি করা হয় সেখানকার আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ বছর সে ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। এখন পরিবারটির সামনে সবই দুঃসহ স্মৃতি।


ছেলে হত্যার বিচারের জন্য শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হবে বলেও জানিয়েছেন আব্দুল মান্নান। 

@bagerhat24.com