Logo
table-post
মোংলার মুর্তিয়মান আতঙ্ক বিএনপি নেতা হানিফ হাওলাদার
01/01/1970 12:00:00

মাসুদ রানা, মোংলা
মোংলায় হিন্দু পরিবারের জমিসহ বেশ কয়েকটি পরিবারের চিংড়ি ঘের, বাড়ি- ঘর দখল ও অসহায় মানুষের উপর নির্মম শারীরিক নির্যাতনের বহু অভিযোগ সুন্দরবন ইউনিয়নেসর ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির নেতা হানিফ হাওলাদার, তার ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে। তার অত্যাচার নির্যাতন আর হুমকিতে ভুক্তভোগীরা ভয়ে এখন অনেকেই বাড়িছাড়া। এ নেতার ক্ষমতার দাপট আর দলবলের প্রভাবের কাছে অসহায় খোঁদ ইউনিয়ন ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।

এবিষয়ে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১০/১২টি অভিযোগ দায়ের হলেও সহযোগিতা সুফল মেলেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তবে সম্প্রতি এলাকায় নতুন করে চিংড়ি ঘের দখল ও মাছ লুট করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বিএনপির এ নতা বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ। 


ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগের সুত্রে জানা যায়, গত আ’লীগের সরকারের সময় উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন’র হাতে শপথ করে আ’লীগে যোগ দেয় হানফি হাওলাদার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ ইউনিয়ন ও উপজেলার আ’লীগের নেতৃবৃন্দরা। সে সময়ও এলাকায় বিভিন্ন অসহায় লোকজনের উপর হামলা-মামলা করে বীরদর্পে ক্ষতার দাপট দেখিয়ে চলছিলেন তিনি। গত ৫ আগষ্টের পর দেশে আ’লীগ সরকারের পতন হলে ভোল পাল্টে হানিফ হাওলাদার বিএনপি হয়ে যায়। কৌশলে বিএনপি নেতৃবৃন্দদের ম্যানেজ করে উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতির পদ দখল করেণ তিনি। স্থানীয় মারুফ শেখ, ছালাম শেখ, হাছান শেখ, গৌতম মিস্ত্রি ও সবুজ শেখ ও ছেলে সহ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে একটি বাহিনী তৈরী করে সে। এর পর থেকেই প্রকাশ হয় তার আসল রুপ। হঠাৎ করে তার দলবল নিয়ে এলাকায় ত্রশ সৃষ্টি করে অসহায় ও নিরিহ মানুষের উপর জুলুম-অত্যাচার শুরু করে। দখল করে এলাকার মানুষের একের পর এক চিংড়ি ঘের, বাড়ি ঘর, ঘের ও পুকুকের মাছ লুট। হিন্দু সম্প্রদয় সহ অসহায় মানুষের উপর চালায় হামলা-মারধর, আর অত্যাচার-নির্যাতন। 


যার মধ্যে সুন্দরবন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জয়দেব কবিরাজ, শ্রী পুলক মন্ডল, মনজিৎ মন্ডল, আলি মুর্তোজা, সতিশ মন্ডল, ধনপতি কির্তুনিয়া ও ফিগার কির্তুনিয়ার, আলী আকুব্বার হাওলাদার, খোকন শেখ, খোকা, সুন্দরবন ২নং ওয়ার্ডের বাঁশতলা গ্রামের জালাল শেখ সহ বেশ কয়েকজনের প্রায় ৩শ একরেরও বেশী মাছের ঘের ক্ষমতা বলে দখল করে বাগদা-গলদা সহ বিভিন্ন প্রকারের মাছ লুট করে বিক্রি করছে সে। এছাড়া ওই একই এলাকায় মৃত আবু হানিফ শেখ’র বসত বাড়ি তার স্ত্রী ও ছেলে রনি শেখ সহ পরিবারের সকলকে মারধর করে বের করে দিয়ে বাড়ি-ঘর জোর পুর্বক দখল করে এ নেতা। বর্তমানে তারা বিএনপি নেতা হানিফ হাওলাদারের ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে স্বপরিবারে অন্যাত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। 


মজার বিষয় হলো, আ’লীগের সময় সুন্দরবন ইউনিয়নের দ্বিগরাজ বাজারে শান্তি মহলদারের একটি ঘর জোর পুর্বক দখল করে  এ বিএনপি নেতা নেয় হানিফ। সেখানে আ’লীগের অফিস করে তৎকালীন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক, এমপি হাবিবুন নাহার, শেখ হাসিনা আর শেখ বুজিবের ছবি টানিয়ে শালিস বিচারও করতো হানিফ হাওলাদার। ৫ আগষ্টের পর আগের ছবিগুলো ফেলে দিয়ে ঠিক একই স্থানে বিএনপির নিজেস্ব অফিস তৈরী করে এখনও শালিস-বিচার করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ক্ষমতার দাপটে সে কাউকেই পরোয়া করছেন না বলে এ নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের দানা বাধতে শুরু করেছে। 


এব্যাপারে অভিযুক্ত হানিফ হাওলাদার বলেন, আমি আগেও বিএনপি ছিলাম, আ’লীগের সময় অনেক হামলা-মামরার শিকার হয়েছি। আর ৫ আগষ্টের পর প্রতিটি ঘেরের মালিককে জমির হাড়ির টাকা দিয়ে মাছ চাষ করছি। এলাকার কিছু সন্ত্রাসীরা অহেতুক আমার উপর হামলা করেছে। এব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। 


সুন্দরবন ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ কবির উদ্দিন বলেন, ৫ আগষ্টের পর থেকে আমি এলাকায় থাকিনা তবে হানিফ হাওলাদার বেশ আগে ইব্রাহিম হোসেন’র হাতে শপথ করে আ’লীগে যোগ দিয়েছিল। সে সময় থেকেই বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমাদের সাথেই ছিল, এর বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। 


৫নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আগে আ’লীগ থাকলেও বর্তমান ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হানিফ হাওলাদারের বিরুদ্ধে মোংলা থানা সহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় ১০/১২টি অভিযোগ দেয়া আছে কিন্ত প্রশাসনকেও পড়োয়া করেনা। সে এলাকায় এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। তার কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় হানিফের সহযোগী বজলু শেখ’র ছেলে সন্ত্রাসী বাদশ শেখ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারার জন্য আমার বাসার সামনে মহড়া দিচ্ছে, যা থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। 


অভিযোগকারী দেবদ্যুতি কীর্তুনিয়া বলেন, হানিফের লোকজন ক্ষমতা প্রয়োগ করে জোর পুর্বক আমাদের চিংড়ি ঘের দখল করে নিয়েছে। পরিবারের নারী-পুরুষদের ওপর নানাভাবে শারীরিক লাঞ্ছনা করা, হুমকি-ধামকী ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে আসছেন। তাদের অত্যাচারে আমাদের এখন বসবাস করা দুরূহ হয়ে পরেছে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিদকার পাইনী। 


সুন্দরবন ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি খানজাহান সরদার বলেন, এলাকার চিংড়ি ঘের দখলের ব্যাপারে বহু অভিযোগ আমাদের কাছে এসছে কিন্ত আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী হানিফ হাওলাদারকে বার বার শতর্ক করা হলেও আমাদের কথা তিনি শুনছেন না। তার কর্মকান্ড উর্ধতন নেতৃবৃন্দদেরকে জানাতো হয়েছে, দলীয় ভাবে ব্যাবস্থা নেয়ার অপেক্ষায় আছ। 


মোংলা থানার ওসি মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, সুন্দরবন ইউনিয়নে হানিফ হাওলাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঘটনার ব্যাপারে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। কিন্ত ঘটনা তদন্তে থানার অফিসারদের পাঠানো হলেও তাদের সাথে অসৌজন্য মুলক আচারণ করেছে সে। এছাড়া হানিফ সম্প্রতি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিষয়টি সহকারী পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া তাকে মারধর করার বিসয়ও তদন্তও চলছে-সিগ্রই ব্যাবস্থা রনয়া হবে। 
 

@bagerhat24.com