
গাঁজায় গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল বাগেরহাট, জিহাদের ডাক ও ইসরাইলি পণ্য বর্জনের অঙ্গীকার
01/01/1970 12:00:00নিজস্ব প্রতিবেদক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে বাগেরহাট। সোমবার (৭ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বাগেরহাট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে কয়েক হাজার জনতা জড়ো হয়ে সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তব্য দেন, জাতীয় ইমাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ উল্লাহ আরেফী, পাগল পীর মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আমিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, ইসলামী যুব আন্দোলন নেতা মাওলানা মাহবুবুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক সাদ্দাম হোসেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা জাহিদ হাসান পলাশ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলী দখলদার বাহিনী ফিলিস্তিনের নিরহ জনগণের উপর অত্যাচার করে আসছে। সেই অত্যাচার এখন সীমা ছাড়িয়েছে। ইহুদীরা নির্বিচারে হত্যা করছে, নিরাপরাধ বেসমারিক মানুষদের। বোমার আঘাতে প্রতিদিনই নারী শিশু নিহত হচ্ছে।ফিলিস্তিনি মুসলমানদের কান্না কেউ সোনে না। বিশ্ব বিবেক আজ নির্বিকার। কোথায় সেই মানবাধিকার? যেখানে শিশু, নারী, সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, সেখানে জাতিসংঘসহ বিশ্বশক্তি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
বক্তারা আরও বলেন, আমরা মুসলমান, আমরা একটি দেহের মতো।
একজন মুসলিম কষ্টে থাকলে অন্যদেরও সেটা অনুভব করতে হবে। আজ আমাদের লজ্জা হয়, আমরা এখনও ইসরাইলি বর্বরতার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছি না।
মুসলমানদের ঐক্য ও জিহাদের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমরা আজ থেকেই ইহুদিদের পণ্য বর্জনের আন্দোলনে শরিক হব। ইসরাইলি অর্থনীতিকে দুর্বল করতে হলে আমাদের বর্জনের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে হবে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ঈমানের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন বক্তারা।
সমাবেশ শেষে শহীদ মিনার চত্বর থেকে তৌহিদি জনতার ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মিছিলটি আবারও শহীদ মিনারে এসে জড়ো হয়। ইসরাইল বিরোধী
স্লোগানে মুখরিত হয় শহীদ মিনার চত্বর। সব শেষে ফিলিস্তিনিদের রক্ষার জন্য বিশেষ মোনাজাত করেন মাওলানা আমিরুল ইসলাম সিদ্দিকী।
এসব কর্মসূচিতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক পার্টি, ইমাম সমিতি, জেলা ছাত্রদল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সহ বিভিন্ন সংগঠন ও ও সাধারণ ছাত্ররা অংশগ্রহণ করে। মুসলমানদের রক্ষায় এক হয়েছিল ইসরাইল বিরোধী এই কর্মসূচিতে।
বাগেরহাটে জামায়াতের বিক্ষোভ
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও উপর্যপুরি বিমান হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাগেরহাটে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সোমবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের দশানি ট্রাফিক মোড়ে পথসভার পর জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সমূহ প্রদক্ষিণ শেষে বাগেরহাট জজকোর্টের সামনে এসে কর্মসূচি সমাপ্ত করে। বিক্ষোভ মিছিলে বাগেরহাটের হাজার হাজার নেতা কর্মী ফিলিস্তিনের পতাকা ও ফিলিস্তিনে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ সম্বলিত বিভিন্ন প্লাকার্ড সহকারে অংশগ্রহণ করে।মিছিল চলাকালীন সময়ে শহরের চতুর্পাশে রাস্তাঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের তাকবীর ধ্বনি ও প্রতিবাদী স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়।
কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রেজাউল করিমের নেতৃত্বে মিছিলে জেলা নায়েবে আমির এ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, জেলা সেক্রেটারী শেখ মোহাম্মদ ইউনূস, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, মিজানুর রহমান মল্লিক, এ্যাডঃ মোস্তাইন বিল্লাহ, জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মনজুরুল হক রাহাদ, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির ফেরদৌস আলী, শহর আমির শামীম আহসান সহ নেতাকর্মীরা অংশগ্রহন করেন।
ইসরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে কচুয়াবাসী
গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার গণহত্যা ও বিমান হামলার প্রতিবাদে বাগেরহাটের কচুয়ায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সর্বস্তরের জনগণের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে এ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
মিছিল শেষ বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন, আর এম আকাশ, রাকিব শেখ, লিমন শেখ, লিংকন, আব্দুল্লাহ ছাদ, আরমান, রাকিব তালুকদার, উৎসব দাস, সাকিব, ফাহাদ, রিমন, সিয়াম প্রমুখ।
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ইসরাইল বিরোধী স্লোগানে মুখর উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো কচুয়া । তারা ‘জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই, জিহাদ করে বাঁচতে চাই,ফিলিস্তিনে হামলা কেন? জাতিসংঘ জবাব চায়,বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো, ইসরাইলের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন চাই,নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন চাই’সহ নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলা ও গণহত্যা মানবতার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন। তারা বলেন, গাজায় নিরীহ শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষদের উপর নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে চরম বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে। এই দখলদারিত্ব ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধে এখনই মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা ও নির্লিপ্ততা এই গণহত্যাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এখন সময় এসেছে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
তারা সরাসরি ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’-এর দাবি জানিয়ে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শুধু কথার প্রতিবাদ যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন শক্ত প্রতিরোধ। বিশ্ব বিবেক জাগ্রত না হলে এই হত্যাযজ্ঞ আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বক্তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তির জন্য বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দ্রুত এবং একসঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্থানীয় একাধিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, মসজিদের ইমাম, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।