ঘের দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন, ক্ষতিগ্রস্ত এক যুবককে বেধরক মারপিট
01/01/1970 12:00:00নিজস্ব প্রতিবেদক
মোরেলগঞ্জে মৎস্য ঘের দখল, লুটপাট, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মারপিটের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রবিবার (০৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বহরবুনিয়া গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিক ও স্থানীয়রা এই মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন। এবিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ঘের ব্যবসায়ী মোঃ মামুন শেখ বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে বহরবুনিয়া এলাকায় জমি লিজ নিয়ে দুটি ঘেরে মাছ চাষ করতাম। হঠাৎ করে সাইদুল মল্লিক, রাজ্জাক হাওলাদার ও রুবেল হাওলাদারসহ অন্তত ১০-১২জন আমাদের ঘের দখল করে এবং ঘের থেকে ১০ লক্ষ টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়। বাঁধা দিতে গেলে তারা আমাদেরকে মারধর এমনকি মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। আমার বাবা আনছার আলী শেখকে বেধরক মারপিট করে। তাদের ভয়ে আমরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। মা-বোনরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহনকারী ১০ শ্রেনির শিক্ষার্থী মিতু আক্তার বলেন, ভয়ে আমরা স্কুলে যেতে পারছি না। বাইরে গেলে আমাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার হুমকি দিয়েছেন চান মিয়া জমাদ্দার ও তার ছেলে। আমরা খুবই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
রশীদা বেগম নামের এক নারী বলেন, আমার মেয়ে একাদশ শ্রেনিতে পড়ে। তাকেও বাড়ি থেকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে বলেছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। কি করব পাঠিয়ে দিয়েছি, সবারই মানসম্মানের ভয় আছে।
সুমন ফরাজী নামের এক ব্যক্তি বলেন, সাইদুল মল্লিক, রাজ্জাক হাওলাদার ও তাদের লোকজন শুধু ঘের দখল করেনি। আনছার আলী শেখ, জয়নাল ফরাজি, সুমনসহএলাকার অন্তত ১০-১২ জনকে মারধর করেছে। তাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ৭-৮টি পরিবার। আসলে আমরা কেউ কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নয়, তারপরও সাবেক যুবদল নেতা সাইদুল মল্লিক ও তার লোকজনের হাতে নির্যাতিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সাইদুল মল্লিক, রাজ্জাক হাওলাদার ও তাদের লোকজন এলাকার মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। প্রকাশ্যে মারধর, ঘের দখল বাড়ি লুট ও চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। মূলত পুলিশের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে তারা এসব করছে। এলাকার মানুষ এসব থেকে মুক্তি চায়।
এদিকে মানববন্ধন শেষে ডালিম মল্লিক নামের এক যুবককে বেধরক মারধর করেছেন সাইদুল মল্লিকের নেতৃত্বে চান মিয়া জমাদ্দার , শুকুর জমাদার, রাজ্জাক হাওলাদার, রাকিব জমাদারসহ তাদের লোকজন। পরে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে এবং স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ডালিমের দুই পা, হাত ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বহরবুনিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুল মল্লিক বলেন, আমি কারও ঘের দখল করিনি। যাদের জমি এবং যারা পূর্বে ঘের করতেন তারাই সরকার পরিবর্তনের পরে ঘের দখল করে নিয়েছে। আর ডালিম ফরাজিকে স্থানীয় জমির মালিকরা মারধর করেছেন, আমি কাউকে মারধরও করিনি।
মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শামসউদ্দিন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।