Logo
table-post
সিনিয়র ১৩ জনকে ডিঙ্গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হওয়ার চেষ্টা !
01/01/1970 12:00:00

এম, এ সবুর রানা

রামপালের ভাগা সুন্দরবন মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল মুক্তাদীর ১৩ জন সিনিয়র সহকারী অধ্যাপকদের ডিঙ্গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের পদ বাগিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রচণ্ডভাবে প্রভাব খাটিয়ে একটি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি ওই কলেজের সকল শিক্ষকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরে পাঠিয়ে তিনি অধ্যাক্ষ হবেন এমনটাই প্রচার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন।

 

এমন সব অভিযোগ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সচেতন নাগরিকবৃন্দ। অভিযোগে জানা গেছে, ওই কলেজের বর্তমান অধ্যাক্ষ শেখ খালিদ আহমেদের চাকুরীর মেয়াদ আগামী ২৪-০২-২০২৫ তারিখে শেষ হবে। মফঃস্বল কলেজে অধ্যাক্ষের পদ শূন্য হলে উপাধ্যাক্ষ থাকলে তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ০৫-০২-২০২৪ তারিখের ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০২.০০১.২০২১.৫১ নং পরিপত্রের (ক) অনুচ্ছেদে বর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী "স্নাতক (পাশ) কলেজে উপাধ্যক্ষ থাকলে অন্য কোন শিক্ষককে অধ্যাক্ষ দায়িত্বভার অর্পণ করা যাবে না। তবে উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য থাকলে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্য হতে জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপকদের মধ্য হতে অধ্যাক্ষের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত)২০১৯ এর ৪ ধারার (ক) ২ (I) উপধারা মোতাবেক কলেজের অধ্যাক্ষের পদ শূন্য হলে ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যাক্ষ/ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত বিষয়সমুহের মধ্য হতে জ্যেষ্ঠতম ০৫ (পাঁচ) জন শিক্ষকের মধ্যে যে কেহ ভারপ্রাপ্ত  অধ্যাক্ষের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে তবেই কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে ভাইস-চ্যন্সেলর ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব প্রদানের বিষয়টি নিষ্পত্তি করবেন। উল্লেখ, জেষ্ঠতার তালিকায় ওই সহকারী অধ্যাপক আবুল মুক্তাদির ১৪ তম বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

 

নীতিমালা অনুযায়ী আবুল মুক্তাদির কোন যোগ্যাতায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হতে পারেন না। কলেজের এডহক কমিটির আহবায়ক শামিমুর রহমান শামীমের নাম ভাঙ্গিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষকদের নিকট থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।

 

অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, উপাধ্যাক্ষ ইজারদার নাহিদুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেননি। নীতিমালা অনুযায়ী অধ্যাক্ষের অবর্তমানে উপাধ্যাক্ষ দায়িত্ব পালনে সক্ষম।

 

অভিযোগ রয়েছে জুলাই বিপ্লবের পরে আবুল মুক্তাদির রাতারাতি নিজের খোলস পাল্টে নিজেকে জাতীয়তাবাদী দাবী করে সকল আইন ও বিধি উপেক্ষা করে ১৩তম জ্যেষ্ঠতা ডিঙ্গিয়ে নিজেকে অধ্যাক্ষ দাবি করছেন। তিনি অর্থনীতির শিক্ষক হলেও তিনি ক্লাসে ছিলেন অনিয়মিত। অধিকাংশ সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাবেক খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও তার সহধর্মিণী বাগেরহাট -৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারকে ম্যানেজ করে গত ১৫/১৬ বছর ধরে শিক্ষক প্রতিনিধি হয়েছেন। বিগত ১৫/১৬ বছর ধরে ওই কলেজের অধ্যাক্ষ, উপাধ্যাক্ষ ও টিআর আবুল মুক্তাদির সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের সাথে সখ্যতা গড়ে ঐতিয্যবাহি ওই বিদ্যাপীঠকে নিজেদের সম্পদ বানিয়েছিলেন। 

এখানেই শেষ নয়, বর্তমানে মুক্তাদির তার কয়েকজন অনুগত সহচর আহবায়কের নাম ভাঙ্গিয়ে অধ্যাক্ষের অনুমতি ছাড়া বহিরাগত ছেলেদের প্রবেশ করিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এসব অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রীদের সম্পৃক্ত করায় ছাত্রীরা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ বিগত দিন ওই নারী বিদ্যাপীঠটি রাজনীতি মুক্ত ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি। আমরা তো রাজনীতি করতে আসিনি। এতে ওই শিক্ষক বলেন, আগের দিন ভুলে যাও, এখন থেকে এই কলেজে আমি যা বলবো সেটাই হবে। গর্ব করে বিগত সময়ের কথা স্বরণ করিয়ে বলেন আমি আজীবন টিয়া ছিলাম, আমি হবু প্রিন্সিপ্যাল ! 

ওই শিক্ষক বিগত সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রীদের সাথে নেচে বিতর্কিত হয়েছেন। অধিকাংশ শিক্ষক তাকে পছন্দ করেন না। তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের পদ পেতে তিনি প্রহসনমূলক অপতৎপরতা চালাচ্ছেন, যা অত্যান্ত ঘৃণিত ও ন্যাক্কারজনক।

সচেতনমহল একমাত্র নারী শিক্ষার উচ্চতর ওই বিদ্যাপীঠটির লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবী করেছেন। তারা বর্তমান আহবায়ক কৃষিবিদ শামীমুর রহমানের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক আবুল মুক্তাদিরের সাথে কথা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একটি মহল আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব দেয়ার জন্য সকল শিক্ষক সেচ্ছাসায় স্বাক্ষর দিয়েছেন। জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, দেখা করে পরে এ বিষয়ে জানাবো।

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যাক্ষ শেখ খালিদ আহমেদের দৃষ্টি আকর্শন করা হলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ সকল বিষয়ে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের আহবায়ক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত সময়ে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এখন কাউকে কোন অনিয়ম করতে দেয়া হবে না। যা কিছুই করা হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা হবে যথাযথ আইন ও বিধি মোতাবেক।

@bagerhat24.com