করোনার কারণে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহত মাছের আড়ৎ বন্ধ ঘোষণা

চিতলমারীর চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা ॥ শুকিয়ে যাচ্ছে ঘের, মরছে মাছ

এসএস সাগর, চিতলমারী

আপডেট : ০৪:২৭ পিএম, বুধবার, ৮ এপ্রিল ২০২০ | ১৯৪৬

দেশে মরণঘাতী করোনার প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বাগেরহাটের ফলতিতা মাছের আড়ৎ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী ও চিংড়ি চাষিরা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ ঘোষণা দেন। আর ঘোষণায় চিংড়ি শিল্প সংশ্লিষ্ট এ অঞ্চলের কমপক্ষে লক্ষাধিক মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুরে এমনটাই জানিয়েছেন চিতলমারী উপজেলার চিংড়ি চাষিরা।


তারা আরও জানান, বেশ কিছুদিন ধরে চিতলমারী উপজেলা সদর বাজারসহ আশপাশের সকল মাছের আড়ৎ বন্ধ রয়েছে। শুকনো মৌসুম হওয়ায় এ সময় অধিকাংশ চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের শুকিয়ে যায়। তাই ওই সকল মাছ বিক্রি না করলে ঘেরেই মাছ মরে যায়। এতদিনে কম দাম হলে তারা ফলতিতা মাছের আড়তে কিছু মাছ বিক্রি করতে পারত। তাই দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বাগেরহাটের ফলতিতা মাছের আড়ৎ বন্ধ হওয়ায় চিংড়ি শিল্প সংশ্লিষ্ট এ অঞ্চলের কমপক্ষে লক্ষাধিক মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

চিতলমারী মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৩০ টি। যার মোট আয়তন ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৭৫৮ টি ঘেরে গলদা ও ২ হাজার ৮৭২ টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ ও ৬ হাজার ৯০০ টি পুকুরে বিভিন্ন মাছের চাষ হয়। এখানের চাষিরা বছরে ৫৮১ মেট্রিকটন বাগদা ও ২ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন গলদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমান সাদা মাছ উৎপাদন করে থাকেন। এখানে ৭ হাজার ৫০০ জন মৎস্য চাষি ও ২ হাজার ৭০২ জন মৎস্যজীবি রয়েছেন। সেই সাথে এই চিংড়ি শিল্প ও মাছ চাষের সাথে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য জড়িত রয়েছে। এ বছরের শুরুতে ঋণগ্রস্থ চাষিরা চিংড়ির উৎপাদন দেখে অনেকটা আশায় বুক বেধে ছিলেন। মাছ বিক্রি করে তাদের ধারদেনা মিটবে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মাছ বিক্রি বন্ধ ও ঘেরের পানি শুকিয়ে চিংড়ি মাছ মারা যাওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এ ব্যাপারে সুরশাইল গ্রামের চিংড়ি চাষি মোঃ এমাদুল হক বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, গত কয়েকদিনে তার চিংড়ি ঘেরের পানি একেবারে শুকিয়ে গেছে। এখন মাছ মারা যাওয়ায় তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

মৎস্য চাষে অভিজ্ঞরা জানান, এ উপজেলায় অপরিকল্পিত চিংড়ি ঘেরের কারণে প্রতি বছর কোন না কোন বিপর্যয় হয়ে থাকে। তাছাড়া এ বছর বৃষ্টিপাত একেবারেই কম হওয়ায় ঘেরে তেমন পানি নেই। তাই করোনার কারণে মাছ বিক্রি করতে না পারলে অনেক চাষি নিঃস্ব হয়ে যাবেন।


ডুমুরিয়া গ্রামের চিংড়ি চাষি বরেণ বাড়ৈ, সুবোধ বাড়ৈ, বিপ্লব বাড়ই, শ্রীরাম পুরের সাধন বৈরাগী, বিপুল মন্ডল, তাপস ভক্ত, নিমাই মন্ডল, কৃষ্ণপদ বালা, অনুপ বালা, দয়াল বালা, তুহিন বিশ্বাস, পাড়ডুমুরিয়া গ্রামের দেবদাস ভক্ত, উত্তম বাড়ৈ, কুরমনি গ্রামের গৌর বাইন, বলরাম বিশ্বাস, সুরশাইলের মুন্না শেখ, শুধাংসু মন্ডল ও আনন্দ বিশ্বাসসহ অনেক চাষি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, হঠাৎ করে মাছ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাই সরকারি সঠিক সাহায্য না পেলে এই শিল্পের ধংস ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।


এ ব্যাপারে ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, দেশের এই ক্রান্তিকালে সকলের মঙ্গলের কথা ভেবেই স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী ও চিংড়ি চাষিরা অনিদৃষ্ট সময়ের জন্য ফলতিতা মাছের আড়ৎ বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে।

তবে, চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোঃ জিল্লুর রহমান রিগান মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, করোনায় মাছের খাত বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছে। সার্বিক বিবেচনা করে সকলকে এটা মোকাবেলা করতে হবে। সরকার এ খাতে মোটা অংকের টাকা প্রণোদনা দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত