উন্নত দেশঃ বাংলাদেশ করনীয়-বর্জনীয় (পর্ব-২)

মো. মহিদুল ইসলাম

আপডেট : ০১:৪৪ পিএম, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১ | ৬৪৬

উন্নত দেশঃ বাংলাদেশ করনীয়-বর্জনীয় (পর্ব-২)

কতটা ভ্রান্ত, উদভ্রান্ত হলে পরে রেল বন্ধ করে রাস্তা বানিয়ে বাসকে লাভ দেয়।রাস্তা বাসকে অবহেলা নয়।দুটোই লাগবে।শুধু তাই নয়।নদী আদী পথ।সবশেষে আকাশপথ।প্রত্যেকটি যোগাযোগ মাধ্যমকে সর্বোচ্চ সফলতার সাথে ব্যবহার করতে হবে।আমাদের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় নদী খাল ভরাট করে, রেল বন্ধ করে রাস্তা বানালে আমরা খুশী। ঘটনাটি ঘটেছে বাগেরহাট-রূপসাঘাট রেলের ক্ষেত্রে।১৯৯৭ এ।রেলপথের পথটি এখন রাস্তা,বাড়ী,বাজার,দখল,বেদখল,বেহাত।কত সময় গেলে বাঙালীর শিক্ষাগত দর্শনগত ভার ভারী হবে! ছিঃ ছিঃ।রেলপথটি তৈরী করা হয় ১৯১৮ এ।আমরা গিলে ফেললাম সোনার হাসটি জবাই করে।বলেশ্বর ভৈরব হয়ে দড়াটানায় পড়ে রেল ধরতাম বাগেরহাটে।বলেশ্বর বলহীন রুগ্ন, রথখোলা তালেশ্বরের বেমরতার কাছে নদীতে বাধ দিয়ে চলছে মাছ চাষ।কত পতন! রাজনৈতিক ঢাল! কত বুদ্ধিমান! আশার আলো সারা দেশ দুনিয়ায় রেল গতি পাচ্ছে। অনেক কাজ চলছে।মান, বিশ্বমান, কাজের গতির দিকে নজর দিতে হবে।

আমাদের সুপার মেগা প্রজেক্ট হবে, হতে পারে পূর্ব-পশ্চিম রেল করিডোর যদি কোনদিন সাহস সুমতি হয়। বরিশাল-ভোলা রেলব্রীজ বা টানেল হতে হবে তার জন্য। ভোলা-লক্ষীপুর রেলব্রীজ বা টানেল করতে হবে। জাতিগুলো যেভাবে উগ্রজাতীয়তায় মেতে মারনাস্ত্র মজুদ করছে সেখানে আমাদের ভরসা মাটির সাথে লড়াই করে রেল করা।যুদ্ধ হবে।যুদ্ধকে পিছিয়ে দিতে ব্যাপক রেল যোগাযোগ সহায়তা করতে পারে।যুদ্ধের ক্ষতি কমাতে টানেল বেশী উপযুক্ত।আমাদের যাদের নিউক্লয়ার শক্তি নেই তাদের অনেক ভাবনার বিষয় আছে।জাপানকে কিভাবে কাবু করেছিল মনে আছে। মিয়ানমার খুব চেষ্টা করছে নিউক্লয়ার ক্ষমতা অর্জনে।বেল্ট-রোড একটি বড় বিকল্প।পূর্ব -পশ্চিম রেল করিডোর আমাদের সাগর সম্ভাবনাকে বিকশিত করবে।উন্নত জীবনের স্বাদ দেবে।প্রতিদিন না হলে প্রতি সপ্তাহে সাগরে যেতে বাধা থাকবে কম।পর্যটনের বিশাল বাজার উন্মুক্ত হবে।সুন্দর বন, কক্সবাজার,নোয়াখালী , লক্ষীপুর, ফেনী, কুয়াকাটা, পাথরঘাটা, চরফ্যাশান, শরনখোলা, মংলা, সাতক্ষীরা, ভোমরাসহ ভোলা, হাতিয়া, সন্দীপ, সোনাদিয়া, কুতুবদিয়াসহ সাগরসংলগ্ন জেলাগুলোতে পর্যটনসহ বন্দর ও ব্যাপক শিল্পায়ন হবে।

জেলেদের পল্লী সিংগাপুরকে যার দূরদর্শী চিন্তায় পরিশ্রমে বানানো হয়েছে তিনি লি কুয়ান ইউ।সিংগাপুর মেট্রো রেল মাটির নীচে তিনতলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। রেল গড়তে হলে শক্তিশালী বৈপ্লবিক রাজনীতিক ইচ্ছা সবচেয়ে বড় দরকার। গোটা দুনিয়ায় হাই স্পীড রেলের দুই তৃতীয়াংশই গড়া হয়েছে চীনে মাত্র ১০ বছরে। তাহলে আমাদের ৫৬০০০ বর্গমাইল জায়গায় কেন মানব সম্পদ কাজে লাগিয়ে দ্রুততম সময়ে রেল গড়তে পারব না? না পারলে আমাদের চালাকির ফাঁদ আমাদের জন্য তৈরী হবে।

যোগাযোগ সংস্কৃতি, দর্শন, ব্যবস্থাপনা, হিসাব, প্রযুক্তি, বিজ্ঞানকে আকড়ে ধরতে হবে। টিকেটের টাকা দেশের পকেটে যা কি না? কোন কোন ফুটো দিয়ে টাকা মিসপকেট হয় কি না? প্রতিটি লেনদেন, প্রতি যাত্রীর টিকেট টাকা ও প্রতি কিলোগ্রাম লিটার মাল পরিবহন বাবদ আয়, হিসাব নিরীক্ষা হয় কি না? কোন কোন খাতে খরচ কত রেল বানাতে-চালাতে? কষ্ট একাউন্টিং মেথড গুলো, হিসাব, নিরীক্ষা, ব্যাবস্থাপনা, তথ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি পদ্ধতিগুলি আধুনিক না সেকেলে? মাল কেনা, বেচায় মূল্য বির্ধারন কিভাবে হয়? ফাঁক, ফাকি কোথায় কোথায়? আমরা কেন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা, কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা দিয়ে রেলপন্য উৎপাদন করে দেশ দুনিয়ার বাজারে চালাতে পারছি না? আমাদের গড়া ফাঁদে আমরা আটক মূলে।এ ফাঁদ ভাঙতে হবে।

ইহুদি,বৌদ্ধ,হিন্দু,খ্রীষ্টানগনের দেশ দুনিয়া পারলে আজান দুনিয়া, রুকু-সুজুদ, হজ্জ দেশ দুনিয়াকে পারতে হবে। আমরা ঝগড়ার দুনিয়া হতে চাই না। রেলসভ্যতা গড়তে হবে আমাদের। পথে মুক্তি চাই। স্বাধীনতা চাই। প্রতিদিন পথে আমাদের গড়ে প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। পূর্ব-পশ্চিম রেল করিডোর চট্টগ্রামকে সরাসরি খুলনার সাথে সংযুক্ত করুন, করুনা দয়া ভিক্ষা চাই।যা যা করা দরকার তা তা করুন। ঢাকা ময়মনসিংহ যতবার যাতায়াত করেছি ৪ লেনকে মরিচিকা মনে হয়েছে। ভারতের কথা ধরলে দেখুন রেলকে তারা কিভাবে আগলে রেখেছে। পাতাল রেল করেছে তারা। কোটি কোটি টাকা নিচ্ছে চিকিৎসা দিতে। বড় বাজার বাংলাদেশ। পাশাপাশি দুটি পথ যদি হত ঢাকা-ময়মনসিং এ তাহলে ৩০-৪৫ মিনিট পৌছে যেত কমলাপুরে রেলগুলি। তা না হলে শুধু ৪ লাইন দিয়ে চলবে না। কেননা জাতীয় যোগাযোগ সংস্কৃতি অনুযায়ী ৪ লাইনের কোথাও না কোথাও কোন না কোন কারনে সরু হতে বাধ্য। কারন গুলো প্রিয় পাঠক পথিকগন যানেন।

ইচ্ছা ইচ্ছা ইচ্ছাটাই আসল।রেল জরীপ,পরিকল্পনা তৈরী ,রেল সামগ্রি উৎপাদন,জমি অধিগ্রহন,লাইন বসানো, স্টেশন নির্মান, পরিচালনা, ব্যাবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রন, গোয়েন্দাকর্ম, হিসাব, তথ্য, সেবা, মেকানিকাল, ইলেকট্রক্যাল, সিভিল, সাইকোলজী, সমাজ, ধর্ম, সংস্কৃতি,পদার্থ,গনিতসহ প্রায় সকল বিষয় নিয়ে রেল। সেখানে আমাদের দুর্বল শিক্ষা রেল সমাজ গড়বে না। রেল আমাদের সিলেবাসে খুব যথার্থ স্থান পায়নি। এক দুই ক্রেডিট পড়িয়ে চলবে না। রেলের জন্যে দেশের মাটি, তলদেশ, শূন্য কতটুকু ব্যাবহৃত হবে। দেশেট পকেটের ক টাকা রেলে বিনিয়োগ হবে? কজন মানুষকে কিভাবে কাজে লাগাতে হবে? কত টাকা ঋন করতে হবে? কত আয় থেকে ঋন শোধ না করতে পারলে মালিকানা দিয়ে দিতে হবে।(চলবে)

মো. মহিদুল ইসলাম

বিসিএস(কর)

যুগ্ম কর কমিশনার

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত