(ফলোআপ} সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষিত
চিতলমারীর নোট-গাইড ব্যবসায়ীর ঔদ্ধত্তপূর্ণ আচরণে সচেতন মহল হতাশ
আপডেট : ০৬:৩৯ পিএম, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২০ | ৩১৮৭
বিভিন্ন পত্রিকায় “নোট ও গাইড বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। চিতলমারীতে নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পুস্তক ব্যবসায়ীরা মরিয়া।” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর বাগেরহাটের চিতলমারীর কতিপয় বই ব্যবসায়ী ও শিক্ষক স্থানীয় সাংবাদিকদের উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা প্রকৃত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হবে বলে হুমকি দেন।
গত কয়েকদিন ধরে নোট ও গাইডের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে রিপোর্ট ছাপা হলেও রহস্যজনক কারনে এখনও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেননি। বন্ধ হয়নি চিতলমারীর নোট-গাইড বিক্রি। বরঞ্চ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জিম্মি করে নোট ও গাইড কিনতে বাধ্য করছে ওই বই ব্যবসায়ীরা ও কতিপয় অসাধু শিক্ষক। বেপোরোয়া হয়ে ওঠা পুস্তক ব্যবসায়ীরা এখানে লাখ লাখ টাকার নোট ও গাইড বই মজুদ করে রেখেছেন। খোদ শিক্ষা মন্ত্রী যেখানে প্রশাসনকে নোট ও গাইড বন্ধে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে চিতলমারীর পুস্তক ব্যবসায়ীদের ঔদ্ধত্তপূর্ণ আচরণে সচেতন মহল হতাশা প্রকাশ করেছেন।
চিতলমারী উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক টিটব বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চিতলমারীর প্রকৃত সাংবাদিকরা গত কয়েকদিন ধরে তাদের স্ব স্ব পত্রিকায় নোট ও গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে সরকারী নির্দেশনামূলক তথ্য সমৃদ্ধ বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যান চিতলমারীর কতিপয় অসাধু শিক্ষক ও পুস্তক ব্যবসায়ী। তারা যে সমস্ত সাংবাদিকরা নোট ও গাইডের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করেছে তাদের বিরুদ্ধে মানহানি মামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১১ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১ টি, নিম্নমাধ্যমিক ১ টি, কলেজ ৪ টি ও মাদ্রাসা ৭ টি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে। আর এদের ঘিরে এ উপজেলায় ১৫-২০ টি নোট ও গাইড বই বিক্রির দোকান রয়েছে। বছরের শুরুতে এই ব্যবসায়ী ও প্রকাশনীর প্রতিনিধিরা মরিয়া হয়ে ওঠেন কে কোন প্রকাশনীর নোট-গাইড বিক্রি করবেন এবং কে কোন স্কুল দখল করবেন। এ নিয়ে রীতিমত শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার মাশুল গুনতে হয় শিক্ষার্থী অভিভাবকদের। শিক্ষকদের নির্ধারিত নোট ও গাইড কিনতে তাদের গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় লেকচার পাবলিকেশন, পাঞ্জেরী, অনুপম, অগ্রযাত্রা ও প্রগতি প্রকাশনীর নোট ও গাইড বই চলে। এরমধ্যে চিতলমারী সরকারি এস এম মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেকচার, বড়বাড়িয়া, সন্তোষপুর, ত্রিপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঞ্জেরী ও বাকি স্কুল গুলোতে প্রগতি, অগ্রযাত্রা ও অনুপম প্রকাশনীর বই নির্ধারন করেছেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষকগন।
সরেজমিনে জানা গেছে, চিতলমারী সরকারি এস এম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের গেটের পাশেই ভাই ভাই লাইব্রেরী। এখানে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নোট ও গাইড বইয়ে ঠাসা।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক শেখ আজিজুল, সমীর মন্ডল, পার্থ মজুমদার, মিঠু বিশ্বাস, মানু শেখসহ অসংখ্য অভিভাবকরা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বছরের শুরুতেই তাদের সন্তানদের নোট ও গাইড কিনতে বাধ্য করছে শিক্ষকরা। কোন প্রকাশনীর বই কিনতে হবে সেটা তারাই ঠিক করে দিয়েছেন। আর এটাকে ঘিরে চিতলমারীতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়েছে নোট ও গাইড বইয়ের দোকান।
চিতলমারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ থাকলেও তাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই। তাই তারা কোন ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম মুঠোফোনে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।